রাজধানীর পশুর হাট

দাম কমিয়েও ক্রেতা না বাড়ায় শঙ্কিত বিক্রেতারা

আল ফাতাহ মামুন

রাজধানীর পশুর হাটগুলোয় গতকালও ক্রেতা সমাগম ছিল কম। শেষ পর্যন্ত সব পশু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় অনেক বিক্রেতা। কমলাপুরের চিত্র ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। প্রথম দিন হাট না জমলেও দ্বিতীয় দিন বেচাকেনা জমে উঠবে—এমন প্রত্যাশা ছিল বিক্রেতাদের। কিন্তু গতকাল সরেজমিন রাজধানীর লালবাগ, ধোলাইখাল, দনিয়া, শ্যামপুর ও পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটগুলো জমে ওঠেনি। পশুর দাম কমিয়েও ক্রেতা টানতে পারছেন না বিক্রেতারা। কারণ হাটগুলোয় ক্রেতা সমাগম ছিল একেবারেই কম। শেষ পর্যন্ত সব পশু বিক্রি করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বিক্রেতারা।

লালবাগ পশুর হাটে কথা হয় বিক্রেতা আবুল খায়েরের সঙ্গে। গতকাল বিকালে তিনি জানান, তার নিয়ে আসা ৪০টি পশুর একটিও বিক্রি হয়নি। সাধারণত ঈদের দুই থেকে তিনদিন আগে পশু বেচাকেনা জমে ওঠে। তাই এখনো হতাশ হননি তিনি। তবে কিছুটা শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে তার মনে, ‘‌শেষ পর্যন্ত সব পশু বিক্রি করতে পারব তো?’ এ শঙ্কা শুধু তারই নয়, রাজধানীর অন্যান্য হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেও একই মনোভাব পাওয়া গেছে।

গতকাল সকালে শ্যামপুর পশুর হাটে গরু দেখছিলেন আল আমিন হোসেন। গরুর দাম কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌গতবারের তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা কম। গত বছর যে সাইজের গরু দেড় লাখ টাকায় কিনেছি, এবার একই সাইজের গরু ১ লাখ ৩০ করে বলছেন বিক্রেতারা।’ তিনি জানান, গতবার ১ লাখ টাকায় গরু পাওয়া কঠিন ছিল। এবার ৮০-৯০ হাজার টাকায়ও কোরবানিযোগ্য গরু পাওয়া যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার গরু বিক্রেতা আমির হোসেন এসেছেন ধূপখোলা হাটে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌মানুষজন একেবারে কম আসছে। যারা আসছে তারাও দরদাম করছে, কিনছে কম। ক্রেতারা হয়তো বাজার যাচাই করছে। দাম বলার সময় আমরা তো বেশিই বলব। দরদাম করে ক্রেতারা গরু নেবেন। গতবারের তুলনায় ঢাকায় এখন পর্যন্ত গরুর দাম কমই। ক্রেতা উপস্থিতি কম হওয়ায় আমরা চেষ্টা করছি অল্প লাভে হলেও যেন সব গরু বিক্রি করে ফেলতে পারি।’

গত বছর ১০টি গরু অবিক্রীত ছিল একই হাটের বিক্রেতা আরিফ রহমানের। তিনি বলেন, ‘এবার বেশি লাভের আশা করছি না। দেশে গরুর সংখ্যা বেশি। তার ওপর সবার নজর থাকে ঢাকার দিকে। ঢাকায় গরু আনলে বিক্রি হলে লাভ আর বিক্রি না হলে যে লোকসান হয়, সেটা পোষানো সম্ভব নয়। তাই আমাদের মনে শঙ্কা জাগছে, সব গরু বিক্রি করা নিয়ে।’

পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাট থেকে গতকাল দুটি গরু কিনেছেন আজমল হোসেন। বাজেট ছিল দেড় লাখ টাকা করে। তিনি জানান, এ হাটে কয়েকজন ক্রেতা দাম বেশি হাঁকছেন। দুই-আড়াই লাখ টাকা দাম হাঁকলেও দেড় লাখ বা আরেকটু বেশি দিয়ে পছন্দসই গরু পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত হাটে ক্রেতাসমাগম কম থাকলেও দৃশ্য পাল্টেছে সন্ধ্যার পর থেকে। হাটসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা গড়াতে হাটে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। তবে সন্ধ্যার পর দাম আরেকটু কম দেখা গেছে।

শনিবার ও বোরবার ক্রেতা সমাগম বাড়লে পশুর ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট হাটের ইজারাদার মো. মইন উদ্দিন চিশতী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত হাটে বেচাকেনা একেবারে কম ছিল। আমাদের কোনো কোনো কাউন্টারে পাঁচ-সাতটা করে গরু বিক্রি হয়েছে। অনেক কাউন্টার শুরুই করেনি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতা সমাগম হতে শুরু করে। তবে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে না।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি, যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে গরু-মহিষ রয়েছে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৬টি। এছাড়া ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৮০১টি। আর উটসহ কোরবানিযোগ্য অন্যান্য পশু রয়েছে ১ হাজার ৮৫০টি। এ বছর কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় দুটি স্থায়ীসহ মোট ২২টি পশুর হাট বসেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে—দনিয়া কলেজ মাঠ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল, আমুলিয়া মডেল টাউন, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, মেরাদিয়া বাজার, কমলাপুরম স্টেডিয়াম এবং বিশ্বরোডসংলগ্ন লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব এলাকার আশপাশের খালি জায়গা।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় নয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কানচুকুরা বেপারিপাড়া রহমান নগর আবাসিক এলাকা, খিলক্ষেতের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, ভাটারার সুতিভোলা খাল, উত্তরার ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের বউবাজার এবং মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিং ও মোহাম্মদপুর বসিলার ৪০ ফুট রোডের খালি জায়গা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন