বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে নানা দুর্ভোগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিলেট নগরীর মূল সড়ক থেকে পানি নামলেও পাড়া-মহল্লার গলিগুলো এখনো ডুবে রয়েছে। ভিড় আছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয়ও ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে বন্যাকবলিত বেশির ভাগ জেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটে বন্যার পানি আরো কমেছে। পানি কমেছে নেত্রকোনায়ও। পানি কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলায়। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এসব জেলায় নানা দুর্ভোগ রয়ে গেছে। সিলেট নগরীর উঁচু এলাকায় বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। তবে নিচু এলাকাগুলোয় সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পানি পুরোপুরি নামেনি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে ১২, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ. মো. সজীব হোসাইন জানান, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকালও তেমন বৃষ্টি হয়নি। সরজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরীর মূল সড়ক থেকে পানি নামলেও পাড়া-মহল্লার গলিতে ডুবে রয়েছে। ভিড় আছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয়ও। অনেকে বলছেন, পানি নেমে গেলেও বাড়িঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেকে ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রাম সুরমা নদী ঘেঁষা। পানি বাড়লেই ঘরে ঢুকে যায়। তবে এবারের বন্যা একটু বেশি ক্ষতি করেছে। ভিটা ভেসে উঠলেও থাকার মতো নেই। এ কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে রয়ে গেছি।’

সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘এখনকার মতো আবহাওয়া থাকলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সিলেট নগরী ও উপজেলা পর্যায়ের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় গতকাল পর্যন্ত ২২ হাজার মানুষ অবস্থান করছিল।

সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য যথেষ্ট সরকারি বরাদ্দ এসেছে। আমরা শুকনো ও রান্না করা খাবারও বিতরণ করছি।’

নেত্রকোনায় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলা পাউবোর তথ্যানুযায়ী উপদাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। অন্যদিকে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ কয়েকটি নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচে এসেছে। 

পানি কমলেও কিছু দুর্ভোগ রয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় নৌকা ও ভেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এবারের বন্যায় নেত্রকোনা সদর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলার প্রায় ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ছিল। 

উত্তরাঞ্চলে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে। প্রায় সব নদ-নদীর পানি কমেছে গাইবান্ধায়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে কমেছে ৪১ সেন্টিমিটার।

এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদরের মোল্লারচর এবং ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ও গজারিয়া ইউনিয়নে নদীভাঙন বেড়ে গেছে। এসব এলাকার নদীতীরবর্তী অনেক বাসিন্দা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নদীভাঙন প্রতিরোধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

উত্তরাঞ্চলের আরেক জেলা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। 

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেট, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও নীলফামারী প্রতিনিধি) 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন