সীমান্তে দুই মাসে ভারত থেকে আসা ৫ লাখ কেজি চিনি জব্দ

নিহাল হাসনাইন

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের বাজারে দাম বাড়ছে চিনির। এ সুযোগে ভারত থেকে অননুমোদিত ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বা চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি আমদানি বাড়ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের হাতে তা ধরাও পড়ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে সীমান্তে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ৫ লাখ কেজির বেশি চিনি জব্দ করেছেন বিজিবি সদস্যরা।

বিজিবি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ পথে আসা এসব চিনির বেশির ভাগই এসেছে সিলেট ও ফেনী সীমান্ত এলাকা দিয়ে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে চিনির দাম এখন দ্বিগুণ। এ অবস্থায় অবৈধ পথে চিনি আসার প্রবণতা বেড়েছে। কখনো বালির ট্রাক, আবার কখনো ভুসির আড়ালে আনা হচ্ছে এসব চিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে আসা এসব চিনি। সন্দেহ করা হচ্ছে, সীমান্তে জব্দকৃতের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দেশের বাজারে এরই মধ্যে প্রবেশ করেছে। 

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা চিনি জব্দের ঘটনা ঘটলেও এর পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। কিন্তু গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ দুই মাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পাচারের সময় জব্দ হয়েছে ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৬৫ কেজি চিনি। এর মধ্যে আগস্টে জব্দ হয়েছে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৪৩ কেজি চিনি। আর চলতি সেপ্টেম্বরে গতকাল পর্যন্ত জব্দ হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২২ কেজি। অবৈধভাবে আসা এসব চিনির চালানের বেশির ভাগই জব্দ হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত এলাকা থেকে। অবৈধ পথে আনা এসব চিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের সময় ফেনী থেকেও কিছু পরিমাণে জব্দ হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গতকালও অবৈধ পথে আসা চিনির একটি চালান জব্দ করেছে বিজিবি। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জব্দ হওয়া চিনির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের পাচার হয়ে আসা ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। বিজিবির জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী জানান, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে বিজিবি টহল দল বালিভর্তি একটি ট্রাক দেখে সন্দেহ হওয়ায় ট্রাকটিকে থামার সিগন্যাল  দেয়। ট্রাকটি বিজিবির সিগন্যাল উপেক্ষা করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে টহল দল ধাওয়া করে সুরমা-বাইপাস সড়ক থেকে ট্রাকটি আটক করতে সক্ষম হয়। পরে বিজিবির টহল দল বালিভর্তি ট্রাকে তল্লাশি করে বালুর স্তরের নিচে লুকানো অবস্থায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় চিনির বস্তা উদ্ধার করে।‌ জব্দকৃত চিনি স্থানীয় শুল্ক অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর একইভাবে সুরমা-বাইপাস সড়কেই একটি ট্রাক থেকে চোরাইপথে আনা প্রায় অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। এগুলোও স্থানীয় শুল্ক অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।

একই দিনে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভারত থেকে অননুমোদিত পথে আনা ২৬ হাজার ৯০০ কেজি চিনি জব্দ করে বিজিবি। এসব চিনি এরই মধ্যে স্থানীয় শুল্ক অফিসে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান।

ফেনীতে গত বৃহস্পতিবার ৫ হাজার ৮৯০ কেজি চিনির আরেকটি চালান জব্দ করে বিজিবি। ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়নগর দিয়ে এ চিনি ভারত থেকে পাচার করে আনা হয়। সীমান্তবর্তী একটি বাড়িতে এ চিনি মজুদ করে রাখা হয়েছিল। সুবিধামতো সময়ে দেশের বাজারে এ চিনি সরবরাহ করা হতো।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পাচার হয়ে আসা চিনি জব্দ করে তা স্থানীয় শুল্ক দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে আসা এসব চিনির চালান সবচেয়ে বেশি জব্দ হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। এখন পর্যন্ত চলতি সেপ্টেম্বর ও আগস্টেই সবচেয়ে বেশি পাচার হয়ে আসা চিনি জব্দ হয়েছে। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরিমাণে চালান ধরা পড়লেও এর পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন