অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ব্লিংকেনের সাক্ষাৎ

পারস্পরিক সহযোগিতা আরো গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ছবি: পিআইডি

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ আগ্রহের কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন এবং সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডলে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিংকেনের সাক্ষাৎ হয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন তারা। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা আরো গভীর করার প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিংকেনের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট, সন্ত্রাস দমন, শ্রমবিষয়ক সংকট, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে বর্তমানে নিউইয়র্কে আছেন অধ্যাপক ইউনূস। অধিবেশনের ফাঁকে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। গত বুধবার নিউইয়র্কের একটি হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার দেশের মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের যেকোনো সমালোচনাকেও স্বাগত জানানো হবে। 

সাক্ষাৎকালে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়েও আলোচনা হয়। মানবাধিকার কর্মকর্তারা স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত প্রায় তিন হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের ওপর জোর দেন। তারা নিরাপত্তা খাতের সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনার আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক রাখার জন্য ব্যবহৃত কেন্দ্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তারা।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি। প্রতিনিধি দলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ডও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো যে বর্তমান বাংলাদেশ নতুন এক বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে।’

বুধবার ড. ইউনূস অংশগ্রহণ করেন নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি বলেন, ‘কোনো অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’

অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কবে নির্বাচন হবে, তার কোনো সময়সীমা আমার কাছে নেই। যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা সামনের মাসগুলোয় সংস্কারের সুপারিশ দেবে। সুপারিশ পাওয়ার পর নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।’

আরেক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমার নেই।’ প্রশ্নকারীকে উদ্দেশ করে তিনি, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি নির্বাচনে লড়ব?’

একই দিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজমান। সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা বাড়ানোর জন্য গেটস ফাউন্ডেশনকে আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন