ভূমি জটিলতায় পটুয়াখালীতে স্লটার হাউজ নির্মাণে অনিশ্চয়তা

বাদল হোসেন, পটুয়াখালী

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

পশু জবাই, গোশত প্রক্রিয়াকরণ ও মান নিয়ন্ত্রণে পটুয়াখালী পৌরসভায় স্লটার হাউজ (আধুনিক কসাইখানা) নির্মাণ করছে সরকার। চলতি বছর জুলাইয়ে বালি ভরাটের কাজটি শুরু হলেও জমি নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমি নিয়ে মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর আদালত নির্ধারিত জমিতে এক মাসের নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন। এর পর থেকেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো খাবার গ্রহণের পূর্বশর্ত হলো এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। স্লটার হাউজে গবাদিপশু জবাইয়ের পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া হবে সতর্কতার সঙ্গে। পশু জবাই করা হবে হাতে। এরপর থেকে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে মেশিনের সাহায্যে। ফলে দূষিত কোনো তরল বা ময়লা-আবর্জনা গোশতের সংস্পর্শে আসার সুযোগ থাকবে না। পশু জবাই ও গোশতের মান নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্লটার হাউজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি তৈরি হলে খোলাবাজারে বা যত্রতত্র পশু জবাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্লটার হাউজ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ দূষণ রোধ সম্ভব হবে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের জৈনকাঠি এলাকার মো. মতলেব আকন ও হালিমা খাতুনের কাছ থেকে ১ একর ১৬ শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে। তবে একই এলাকার মোস্তফা হাওলাদারসহ ২৫ জন ওই জমির মালিকানা দাবি করে ২০২৩ সালে পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় হালিমা খাতুন এবং পৌরসভার সাবেক মেয়রসহ ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. রাসেল মজুমদার স্লটার হাউজের জন্য নির্ধারিত জমিতে এক মাসের নিষেধাজ্ঞা (স্থিতি অবস্থা) জারি করেছেন। একই সঙ্গে কেন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না মর্মে আদালত বিবাদীদের কাছে জানতে চেয়েছেন।

মামলার বাদী মোস্তফা হাওলাদার বলেন, ‘ওই জমির মূল মালিক মমিন আলী। তিনি অনেক আগেই জমি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা মূলত জমির মালিক নন।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের জৈনকাঠি এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে। ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬০ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি করছে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিবেশ এবং জনস্বাস্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এটি বাস্তবায়িত হলে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু এখন আদালতের সিদ্ধান্তই আমাদের মেনে নিতে হবে।’

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) প্রধান কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার পার্থ প্রতীম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মেহেদী হাসান এবং মনিটরিং অফিসার উম্মে হাবিবার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

তবে প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার উম্মে হাবিবা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জমি নিয়ে বিবাদ কিংবা আদালতের মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

সরজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের নির্ধারিত জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ড্রেজার দিয়ে বালি ভরাট করা হচ্ছে। জমির মালিকানা দাবিকারী অথবা দুই-তিনজন একসঙ্গে গেলেই কাজ বন্ধ করে রাখা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, স্লটার হাউজ পরিবেশবান্ধব। তবে প্রকল্পের জন্য বিবদমান জমি নির্ধারণের কারণে বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এ কারণে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানেন না। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন