ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি কমেছে

ডিলারশিপ হারানোর শঙ্কায় যশোরের ব্যবসায়ীরা

আবদুল কাদের, যশোর

ছবি : সংগৃহীত

ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছেন মোটর যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীরা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপও রয়েছে খাতে। সুদের হারও পৌঁছেছে দুই অংকের ঘরে। দুই বছর ধরে এভাবে চলতে থাকায় ডিলারশিপ হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন যশোরের ব্যবসায়ীর। তাদের দাবি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলেও শুল্ক করছাড়ের উদ্যোগ নিচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবসার খরচ কমে, এমন কোনো উদ্যোগও সরকারের তরফ থেকে দেখা যাচ্ছে না। একে তো ব্যবসায় কোনো গতি নেই। একই সঙ্গে আমদানি খরচ বাড়লে পণ্যের দামও বাড়বে। ভোক্তারাও যন্ত্রাংশ কেনা থেকে বিরত থাকছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি সরবরাহের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় যশোর জেলাকে। কেননা এখানকার আমদানিকারকরা সারা দেশে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেন। প্রায় দুই হাজার দোকানির বিনিয়োগ রয়েছে খাতে। কভিডের সময় ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ ছিলেন আর্থিক ঝুঁকিতে। এখন ডলার সংকটে আমদানি করতে না পারায় ব্যবসা তলানীতে। এভাবে চলতে থাকলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ডিলারশিপ হারাতে পারেন তারা। কারণ যন্ত্রাংশ আমদানি করতে না পারলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ঢাকার ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ দিয়ে দিতে পারে। বর্তমানে পণ্য না থাকায় ব্যবসা এক প্রকার বন্ধ। কর্মচারীদের বেতন দেয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

যশোর-খুলনা সড়কের ফারিয়া মোটরসের স্বত্বাধিকারী আমদানিকারক রোজোয়ান আহমদ মুরাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কভিডের কারণে গত দুই বছর ব্যবসা ভালো হয়নি। কোনো রকম টিকে ছিলাম। পুঁজি ভেঙে কর্মচারীদের বেতন দিয়েছি। এখন এলসি করতে না পারায় পণ্য আমদানি করতে পারছি না। আবার ব্যাংকগুলো ঋণও দিচ্ছে না। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানি খরচও বেড়েছে। যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় ক্রেতারা প্রয়োজন ছাড়া কিনছে না। সব মিলিয়ে ব্যবসার অবস্থা কী হবে বুঝতে পারছি না।

মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিকারক রিপন অটোস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এজাজ উদ্দিন টিপু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার প্রতিনিয়িত বেড়ে চলেছে। আবার সরকার নির্ধারিত দামে ডলার মিলছে না। এতে পণ্য আমদানি খরচ বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে বিক্রিতে। ক্রেতারা ডলারের দাম বাড়ার বিষয়টি বুঝতে চান না। খাতের সবার ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছেন না।

বেনাপোল কাস্টম অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে বেনাপোল দিয়ে মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি হয়েছে হাজার  কোটি টাকার। বেনাপোল কাস্টমের রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ আসে উচ্চ শুল্কযুক্ত গাড়ির চেচিস মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি থেকে। এলসি না হওয়ায় আমদানি কমে গেছে। চলতি বছরের ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কাস্টমসে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শেফায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এলসি না হওয়ায় মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি  কমেছে। কারণে রাজস্ব আয়ও কমেছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির চেচিস মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আহরণও বাড়ে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবেএটাই স্বাভাবিক। এক বছর ধরে মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারতীয় বড় কোম্পানিগুলো বলছে যন্ত্রাংশ নিতে না পারলে ডিলারশিপ অন্য কোথাও দিয়ে দেয়া হবে। এলসি করতে না পারায় বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারছেন না। কিছু বড় ব্যবসায়ী যন্ত্রাংশ আনলেও ডলারের কারণে খরচ বাড়ছে তাদের। অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়েছেন।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলার সংকট বিনিময় হার বাড়ার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গাড়ি যন্ত্রাংশ আমদানিকারকরা। যশোর শহরের আরএন রোড মোটর যন্ত্রাংশ বিক্রির কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এলসি বন্ধ থাকায় খাদ্যপণ্য ছাড়া সব আমদানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে একদিকে ব্যবসায়ীরা খেলাপি হচ্ছেন, অন্যদিকে খাতে কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি খরচ বাড়ে। যার প্রভাব পড়ে সরাসরি ভোক্তার ওপর। ব্যবসার খরচ কমাতে না পারলে সামনের দিনে টিকে থাকা কঠিন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন