বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিয়ে চীনা ইভির ওপর শুল্ক ইইউর

বণিক বার্তা ডেস্ক

শুল্ক বাধার মুখে পড়ছে চীনের বৃহৎ ইভি নির্মাতা বিওয়াইডি ছবি: বিওয়াইডি

চীনা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) ওপর ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ বাবদ চীনা কোম্পানিগুলোকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাড়তি ২ বিলিয়ন ইউরো বা ১৭০ কোটি পাউন্ড অর্থ গুনতে হবে। ইইউর সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন এক অর্থে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

চীনা ইভির ওপর সরকারি প্রণোদনা নিয়ে কয়েক মাস আগে তদন্ত শুরু করে ইইউর বাণিজ্য কমিশন। এর সূত্র ধরে নতুন এ শুল্ক আরোপ।

শুল্কের বিষয়টি এরই মধ্যে চীনকে জানিয়ে দিয়েছে ইইউ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুসারে, জুলাই থেকে অস্থায়ীভাবে শুল্ক প্রয়োগ হবে। সে হিসাবে বৈশ্বিক এ সংস্থায় ইইউর শুল্ককে চ্যালেঞ্জ করার জন্য চার সপ্তাহ সময় পাচ্ছে চীন।

বর্তমানে অঞ্চলটিতে আমদানি করা গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক চালু রয়েছে। এর অর্থ হলো চীনা ইভির ওপর ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। নতুন বাধার প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং জানিয়েছে, চীনা কোম্পানিগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেবে তারা।

প্রায় নয় মাসের তদন্ত শেষে চীনা ইভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইইউ। এতে দেশটির সবচেয়ে বড় ইভি কোম্পানি বিওয়াইডি লক্ষ্যবস্তু হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চীনের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে কাজ করা বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো বাধার মুখে পড়ছে।

এক বিবৃতিতে ইইউ জানিয়েছে, ভর্তুকিবিরোধী তদন্তে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায় যে চীন সরকারের দেয়া অন্যায্য ভর্তুকি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে ইভি কোম্পানিগুলো। এ ধরনের ভর্তুকিযুক্ত গাড়ি ইইউর গাড়ি শিল্পের জন্য বড় ধরনের আঘাত।

নতুন পরিকল্পনার অধীনে পাঁচ স্তরে শুল্ক প্রয়োগ করবে ব্রাসেলস। যেসব ইভি নির্মাতারা তদন্তে সহযোগিতা করেছে তারা ২১ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবেন। যথাযথ সাহায্য না করায় ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ শুল্কের বিধান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এসএআইসি সর্বাধিক ট্যারিফের মুখোমুখি হচ্ছে। এ কোম্পানির অধীনে রয়েছে ব্রিটিশ ব্র্যান্ড এমজি। ভলভোর অংশীদার জিলিকে দিতে হবে ২০ শতাংশ শুল্ক। তবে বিওয়াইডির ব্র্যান্ডগুলোয় ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে, যার মধ্যে গত বছর ইইউর বাজারে প্রবেশ করা ডলফিন ও সিল গাড়ি অন্তর্ভুক্ত।

আগামী ৫ জুলাই থেকে নতুন শুল্ক যোগ হতে পারে। এতে প্রারম্ভিক ৩০ হাজার ইউরোয় বিক্রি হওয়া বিওয়াইডির সঙ্গে বাড়তি ৫ হাজার ২৫০ ইউরো যোগ হতে পারে। এভাবে হিসাব করলে চীনে উৎপাদিত ফক্সওয়াগনের দাম বিওয়াইডির চেয়ে বেশি হতে পারে। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, জার্মান কোম্পানিটির চীনা পণ্যগুলো ইউরোপে বিক্রি হয় না। অন্যদিকে শুল্ক বাধা এড়াতে বেলজিয়াম থেকে ইভি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভলভো।

ইইউর কর্মকর্তারা বলছেন, হাঙ্গেরিতে পরিকল্পিত বিওয়াইডি কারখানাকে তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ কারখানাটি ইইউ অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে।

এদিকে গত বছর ইইউ থেকে চীনে ২০ হাজার কোটি ইউরোর যানবাহন রফতানি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পরে চীনকে এ ব্লকের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাজার করে তুলেছে। ইইউর পদক্ষেপের কারণে যানবাহন, ফরাসি পানীয় থেকে দুগ্ধজাত পণ্যসহ অন্যান্য খাতে রফতানির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে চীন। এরই মধ্যে ইউরোপীয় দুগ্ধজাত পণ্য ও মাংস নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের বাজার হারানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জার্মানির পরিবহনমন্ত্রী ভলকার উইসিং।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন