তীব্র অর্থনৈতিক মন্দায়ও টিকে থাকবে মার্কিন ব্যাংকগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ারম্যান মিখাইল বার ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্যাংকগুলো তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও টিকে থাকতে পারবে বলে দাবি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। তারা বলছে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও ব্যাংকগুলো ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের ঋণ দেয়া অব্যাহত রাখতে পারবে। 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার সক্ষমতা যাচাইয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়, যা ‘স্ট্রেস টেস্ট’ নামে পরিচিত। ফেডসহ অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ পরীক্ষা চালিয়ে থাকে। সম্প্রতি ৩১টি ব্যাংকের অংশগ্রহণে পরিচালিত স্ট্রেস টেস্ট শেষে এমন মন্তব্য করেছে ফেডারেল রিজার্ভ।  

এক বিবৃতিতে ফেডারেল রিজার্ভ জানিয়েছে, চলতি বছর টেস্টে অংশ নেয়া ব্যাংকগুলো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ন্যূনতম পুঁজির হার বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সক্ষমতা দেখিয়েছে। 

টেস্টে এ বছর বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে রিয়েল স্টেট খাতের মূল্য ৪০ শতাংশ ও আবাসন খাতের মূল্য ৩৬ শতাংশ কমে যাবে বলে ধরে নেয়া হয়েছিল। এর আগের বছরও প্রায় একই ধরনের কল্পিত পরিস্থিতি ধরে নিয়ে স্ট্রেস টেস্ট চালানো হয়।

ফেডের ভাইস চেয়ারম্যান (তত্ত্বাবধান) মিখাইল বার বলেন, ‘এ বছর স্ট্রেস টেস্টের ফলাফলে দেখা যায়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো প্রায় ৬৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কল্পিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে এর মধ্যেও তারা দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য সংরক্ষিত পুঁজির চেয়েও বেশি পুঁজি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্যাংকগুলো যে অতিরিক্ত পুঁজি সঞ্চয় করেছে, এটি তার প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করছে। এটা একটা ভালো খবর।’   

ফেড প্রতি বছর স্ট্রেস টেস্ট পরিচালনা করে থাকে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণের বিপরীতে কতটুকু পুঁজি ধরে রাখবে অথবা ব্যাংকের শেয়ার কেনার পরিমাণ ও লভ্যাংশ কত হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। এ বছর স্ট্রেস টেস্টে বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেপি মর্গান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাকস, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ট্রুইস্ট অংশ নিয়েছে।

এ পরীক্ষায় স্বতন্ত্রভাবে কোনো ব্যাংকেরই খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায়নি। তবে টেস্টের ফলাফলে দেখা যায়, সামষ্টিকভাবে ব্যাংকগুলোর মোট মূলধন ২ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে যাবে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।  

এর কারণ হিসেবে ফেড বলছে, ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড ও করপোরেট বন্ডের বিপরীতে বেশি পরিমাণ ঋণ ধরে রেখেছে। খেলাপির সম্ভাবনা থাকায় এসব ঋণকে সাধারণত উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। তাছাড়া ব্যাংকের ঋণদানের পরিমাণও কমে গেছে। 

মিখাইল বার বলেন, ‘কল্পিত মন্দা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ভালো পরিস্থিতি দেখা গেলেও কিছু বিষয়ে এখনই নজর দিতে হবে। আর্থিক খাতের পদ্ধতি ও ঝুঁকি সবসময়ই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ঝুঁকি মোকাবেলা করতে না পারার মূল্য আমরা ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক মহামন্দার সময় দিয়েছি।’ 

এদিকে আর্থিক সংকট ও বাণিজ্যিক মন্দা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো কেমন আচরণ করতে পারে সে পরীক্ষাও চালিয়েছে ফেড। আটটি ব্যাংকের ওপর চালানো ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, মন্দার কারণে পুঁজি সংগ্রহের ব্যয় বেড়ে গেলেও ব্যাংকগুলো ঝুঁকি সামলে নিতে সক্ষম। তবে পাঁচটি বড় উৎস থেকে বিনিয়োগ বন্ধ হলে ব্যাংকগুলো ৭ থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। 

ফেড বলছে, টেস্টের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বড় উৎসগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো বড় ধরনের মন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।

আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর শেয়ার পুনরায় কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন