প্রথম প্রান্তিকে পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

মন্দা থেকে বেরিয়ে এসেছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। একই সঙ্গে পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি। সম্প্রতি প্রকাশিত সংশোধিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রাথমিক পূর্বাভাসের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। খবর বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের দেয়া প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল দশমিক ৬ শতাংশ।

যুক্তরাজ্যের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর ছিল।

দেশটির বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী জিডিপির ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সাধারণ মানুষ তাদের ভোক্তা ব্যয় বাড়িয়েছে, অতিরিক্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, সরকারি কোষাগারে কর প্রদানের হার বেড়েছে এবং শ্রমিকরাও ভালো বেতন পাচ্ছেন।

ওএনএস বলেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকের  চিত্র অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ছিল। এক্ষেত্রে ব্যবসার পাশাপাশি হেয়ারড্রেসার, ব্যাংক ও আতিথেয়তার মতো পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

তবে পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও একই সময় উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা নিম্নমুখী ছিল। সংশোধিত জিডিপি অনুসারে, বছরের প্রথম তিন মাসে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সংগঠন জি-সেভেন গ্রুপে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক সংশোধিত এ পরিসংখ্যানকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্রিটিশদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার পরিবারের জন্য আরো নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রদানের জন্য আমাদের দলের স্বচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে।’

তবে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতারা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, ব্রিটিশ অর্থনীতির দুরবস্থার জন্য কনজারভেটিভ নেতৃত্ব দায়ী।

লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘লেবার সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাবে এবং প্রমাণ করবে—প্রবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে ব্রিটেন ব্যবসায়িক গন্তব্য হিসেবে উন্মুক্ত। এর মাধ্যমে আমরা জনগণের পকেটে অর্থ ফেরত দিতে চাই।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাট ট্রেজারির মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন সত্ত্বেও পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে বন্ধকি ঋণ পরিশোধ, অন্যায্য কর ও খাবার ব্যয় বৃদ্ধির মতো সংকটে পরিবারগুলো স্বস্তিতে নেই।’

গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের যুক্তরাজ্য অংশের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেন, ‘মূলত ভোক্তা ব্যয়ের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জিডিপিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি এসেছে।’

ওএনএস বলেছে, বিনোদন ও সংস্কৃতির পাশাপাশি আবাসন ও খাবারের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারগুলোয় খরচ ও সঞ্চয়ের মতো অর্থের জোগান বাড়ে।

পল ডেলস বলেন, ‘গত বছরের শেষে পারিবারিক সঞ্চয়ের হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে, যা ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে সর্বোচ্চ হার ছিল। কারণ কভিডের সময় সঞ্চয় ব্যাপক বেড়েছিল।’

তিনি যোগ করেন, ‘আগামী সপ্তাহে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় তিনি নতুন পরিসংখ্যানের সুবিধা পাবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি প্রতিটি দলের ইশতেহারের কেন্দ্রে রয়েছে। যদিও কীভাবে সেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যেতে পারে, তার বিবরণে ভিন্নতা রয়েছে। একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি কীভাবে সম্পদ তৈরি করে, জনগণের পকেটে কীভাবে আরো অর্থ আসবে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত কোষাগারে করের পরিমাণ কীভাবে বাড়িয়ে তোলা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছে দলগুলো।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন