দোষ স্বীকার বা মামলা

কোনটি বেছে নেবে বোয়িং

বণিক বার্তা ডেস্ক

সুরক্ষামান নিয়ে সংকটে থাকা নতুন বোয়িংয়ের সরবরাহ তলানিতে নেমে এসেছে ছবি: এপি

দুটি দুর্ঘটনার পর নিষ্পত্তি চুক্তিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং, সাম্প্রতিক এক তদন্তে এমন প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির সামনে দুটি বিকল্প থাকবেহয় দোষ স্বীকার করে নেবে, নয়তো ফৌজদারি আইনে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর রয়টার্স।

মার্কিন বিচার বিভাগ শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়ে প্রস্তাব দেবে। সেখানে দোষ স্বীকার করে নিলে আর্থিক জরিমানা গুনতে হবে বোয়িংকে। এছাড়া সুরক্ষা ব্যবস্থা কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষণের জন্য তিন বছর নজরদারির আওতায় থাকতে হবে।

প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য বোয়িংকে চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেবেন বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে দর কষাকষির কোনো সুযোগ থাকছে না। বোয়িং যদি দোষ স্বীকার না করে, তবে কোম্পানিটিকে বিচারের আওতায় নিয়ে যাওয়া হবে। অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে বোয়িং বিচার বিভাগ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গত জানুয়ারিতে মাঝ আকাশে আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট থেকে প্যানেল খুলে পড়ে যায়। এর পর থেকে সুরক্ষা নীতিসংক্রান্ত জটিলতার মুখে রয়েছে বোয়িং। পিছিয়ে গেছে কোম্পানিটির নতুন উড়োজাহাজ তৈরি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ। এর প্রভাব পুরো এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ খাত সংশ্লিষ্টদের। তবে বিচার বিভাগের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত কয়েক বছর আগের দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

২০১৮ ২০১৯ সালে দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন যাত্রী নিহত হন। অভিযোগ আছে, এসব ঘটনায় তদন্তকে প্রভাবিত করতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিল বোয়িং। সম্প্রতি এমন প্রমাণ পাওয়ার পর মার্কিন বিচার বিভাগ বলছে, বোয়িং ২০২১ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। আলাস্কা এয়ারলাইনসের সুরক্ষা কেলেঙ্কারির পর ফৌজদারিভাবে অভিযুক্ত করার পদক্ষেপ উড়োজাহাজ নির্মাতাকে নতুন সংকটে ফেলবে।

দোষ স্বীকার করে নিলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বোয়িংয়ের যুক্ত হওয়ার সক্ষমতায় প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি থেকে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির আয়ের বড় একটি অংশ আসে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রস্তাব এক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে তা স্পষ্ট নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফৌজদারি পদক্ষেপের বিষয়ে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

যদিও ২০২১ সালের চুক্তি সম্পর্কে বোয়িং বলেছিল, তারা চুক্তির শর্তগুলোকে সম্মান দেখিয়েছে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার আইনজীবীরা জানান, ‘চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে তদন্তে এমন কিছু খুঁজে পাওয়ার দাবির সঙ্গে তারা একমত নয়।

২০১৮ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পরে জাভা সাগরে লায়ন এয়ারের একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে ১৮৯ যাত্রীর সবাই নিহত হয়। পরের বছরের মার্চে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে উড্ডয়নের মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১৫৭ জনের সবাই নিহত হয়। দুটি দুর্ঘটনার জন্যই ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমকে দায়ী করা হয়। এরপর ২০২১ সালে বিচার এড়াতে বোয়িং মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যে বিচার মুলতবি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আওতায় বোয়িং তাদের নিম্নপদস্থ দুই কর্মচারীকে প্রতারণার জন্য দোষারোপ করে এবং ২৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। এর বিনিময়ে বোয়িংকে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে রেহাই দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং তিন বছরের জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখাসহ নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার শর্ত দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন