২০৩০-৩৫ সাল

কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের আকার দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি ডলার

বণিক বার্তা ডেস্ক

এভিয়েশনের মতো কিছু খাতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা কঠিন ছবি: রয়টার্স

বিদ্যমান জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে রাসায়নিক, এভিয়েশনের মতো কিছু শিল্পের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর সাশ্রয়ী বিকল্প বের করে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। এক্ষেত্রে অনেকটা ক্ষতিপূরণের মতোই বিকশিত হয়েছে কার্বন ক্রেডিট মার্কেট। এতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর আইনি শর্ত পূরণে নিঃসরণক্ষমতা কিনে নেয় কোম্পানিগুলো। সেই অর্থ ব্যবহার হয় নিঃসরণ হ্রাসসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা অলিভার ওয়ম্যানকে উদ্ধৃত করে আরব নিউজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী এক দশকে কার্বন ক্রেডিট মার্কেটে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে। গত বছর বিশ্বব্যাপী এর আকার ছিল ২৭০ কোটি ডলার। ২০৩০-৩৫ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। মূলত কার্বন ক্রেডিট কিনতে করপোরেট কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়ায় এ পরিবর্তন ঘটবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, কার্বন ক্রেডিট প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রকৌশলগত সমাধানে আনুমানিক ২ হাজার ১০০ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বাকি ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে প্রকৃতিভিত্তিক প্রকল্পগুলোয়। 

মোট বিনিয়োগের দেড় হাজার কোটি ডলার এসেছে সরকারিভাবে। বাকি ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেসরকারি উৎস থেকে পাওয়া গেছে। তবে অলিভার ওয়ম্যানের পরামর্শ অনুসারে, কার্বন ক্রেডিট প্রকল্পের আকার বর্তমানের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বাড়ানো প্রয়োজন।

মূলত একটি কোম্পানি কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বা অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ করতে পারবে তার একটি মাত্রা ঠিক করে দেয় সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ শর্ত পূরণের কার্বন ক্রেডিট কেনে কোম্পানিগুলো। যেখানে এক ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে এক টন কার্বন নিঃসরণের অনুমতি পায়। 

তবে কার্বন ক্রেডিটের ব্যবহার নিয়ে বরাবরই সমালোচকরা সতর্ক করে আসছেন। তারা বলছেন, ক্রেডিট কেনার ওপর বেশি মনোযোগ দেয়ায় কোম্পানিগুলো সম্ভাব্য নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে বাধ্য থাকে না।

গত কয়েক দশকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা জলবায়ু উদ্বেগের প্রধান সূচক হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর প্রধান কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতার কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাসের বৃদ্ধি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সীমাবদ্ধ করতে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে উদ্যোগী হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেয়া হবে না। এ কারণে নবায়নযোগ্য ও গ্রিন এনার্জির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু অনেক শিল্প ক্ষেত্রেই সাধারণ প্রযুক্তিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হয় না। 

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সম্পর্কে অলিভার ওয়ম্যানের অংশীদার এবং ইউরোপের ক্লাইমেট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের যুগ্ম প্রধান জেমস ডেভিস বলেন, ‘কার্বন ক্রেডিট প্রকল্পে করপোরেট আগ্রহ ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বিদ্যমান অবস্থা পরিবর্তনে তাদের ভূমিকার ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি তুলে ধরে।’ 

তবে এও জানান, কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ প্রকল্পে আগ্রহ ও বিনিয়োগ থাকলেও কার্বন ক্রেডিটের বর্তমান চাহিদা অনুসারে বিনিয়োগ অপর্যাপ্ত। এ ঘাটতি জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা ও গুণমান রক্ষায় বৈশ্বিক ঐকমত্যের অভাব রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশই পূরণ হবে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কার্বন ক্রেডিট মার্কেটকে লক্ষ করে ২০২২ সালে সৌদি আরব রিজিওনাল ভলান্টারি কার্বন মার্কেট কোম্পানি (আরভিসিএমসি) চালু করে। এতে দেশটির প্রাথমিক মূলধন ছিল ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এর আওতায় ২০২৩ সালে দুটি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই নিলামে সৌদি আরামকো, নিওম, সাবিক ও অন্যান্য দেশী কোম্পানির কাছে ৩৬ লাখ টন কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করা হয়। 

কার্বন ক্রেডিটের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ অর্থ প্রকৃতি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বনায়নের মতো প্রাকৃতিক উপায়। রয়েছে ডিরেক্ট এয়ার ক্যাপচারের মতো প্রকৌশলভিত্তিক প্রচেষ্টা। 

এ বিষয়ে অলিভার ওয়ম্যান বলছে, কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করা কঠিন এমন করপোরেট ক্রেতাদের সমাধানগুলো আকর্ষণ করছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারী ও প্রকল্প উন্নয়নকারীদের কাছে কার্বন ক্রেডিট উচ্চ প্রবৃদ্ধির উদীয়মান শিল্পে পরিণত হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে কার্বন ক্রেডিট বাজার বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির ভূমিকা, তত্ত্বাবধান ও কার্বন নিঃসরণ কমানোয় আর্থিক বাজারের ইকোসিস্টেম তৈরি।

এছাড়া পারিপার্শ্বিক আরো কিছু বাধার উল্লেখ করেছে অলিভার অয়ম্যান। যার মধ্যে রয়েছে কার্বন ক্রেডিটের ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা এবং প্রকল্প মূল্যায়নে সরকারি খাতে বিদ্যমান নীতির অস্পষ্টতা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিট জিরো কার্বন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কার্বন ক্রেডিট ও নিঃসরণ কমানোর মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা। কিন্তু এ নিয়ে নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে স্পষ্ট কোনো ঐকমত্য নেই, যা এ খাতের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন