সাত নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

৯ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঘরের প্রায় চাল পর্যন্ত উঠে গেছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সাত নদ-নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে গতকাল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে ৯ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকালের বিকাল ৩টার বুলেটিন অনুযায়ী, ঘাঘট নদের পানি গাইবান্ধা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়ায় (কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী) বিপৎসীমার ৬৬, হাতিয়ায় (উলিপুর) ৭৪ এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদীর পানি ফুলছড়িতে (গাইবান্ধা) বিপৎসীমার ৭৪, বাহাদুরাবাদে (জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ) ৭৭, সাঘাটায় ৭৩, সারিয়াকান্দিতে (বগুড়া) ৩২, কাজীপুরে (সিরাজগঞ্জ) ৬, জগন্নাথগঞ্জে (জামালপুরের সরিষাবাড়ী) ৭১ এবং সিরাজগঞ্জ সদর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে (সিলেট) বিপৎসীমার ৭০ ও সিলেট সদরে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদে (জকিগঞ্জ) বিপৎসীমার ১৫৫, শেওলায় (বিয়ানীবাজার) ৪৭, শেরপুর-সিলেটে ১৬ ও মারকুলি (হবিগঞ্জের বানিয়াচং) পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পুরনো সুরমা নদীর পানি দিরাই পয়েন্টে (সুনামগঞ্জ) বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সোমেশ্বরীর পানি কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে বণিক বার্তার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা বন্যার খবর পাঠিয়েছেন। সিলেটে চলমান বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারার পানি কোথাও ১ সেন্টিমিন্টার কমলেও অন্য পয়েন্টে বাড়ছে। পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারার সবকটা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় বানভাসী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৯ হাজার ২৩৪ জন অবস্থান করছেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরে বন্যার পানি নামছে। ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে নদীগুলোয় পানি বেড়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেশি হলে সিলেটে তার প্রভাব পড়ে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, আজ থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হচ্ছে।’

এছাড়া বগুড়ায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নদী এলাকার নিচু জমি তলিয়ে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

পাউবোর তথ্যানুযায়ী, সারিয়াকান্দির ইছামারায় ৫০০ মিটার, হাটশেরপুরে ৩০০ মিটার, কর্নীবাড়ীতে ১০০, সোনাতলার সুজাতপুরে ১৫০, সারিয়াকান্দীর শিমুলদায়েরে ৬ এবং ধুনটের শহড়াবাড়ীতে ৬ মিটার নদীর পার ঝুঁকির মুখে।

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, পানি বাড়ার কারণে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ী, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ী, চালুয়াবাড়ির চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। পানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কুড়িগ্রাম নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। চরাঞ্চলে ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় গবাদিপশুসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এদিকে জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় প্লাবিত হয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২৫ হাজার পরিবার। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নতুন জেগে ওঠা চরের ঘরবাড়ি প্রায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলার পূর্ব বালাডোবা চরের বাসিন্দা আফজাল প্রামাণিক জানান, ঘরের প্রায় চাল পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। থাকার কোনো উপায় নেই। তাই স্ত্রী, সন্তান, গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে দিন কাটছে তার।

তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের ঘর-বাড়িসহ নিম্নাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক। এতে যাতায়াতের চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। এসব এলাকায় নৌকাই হয়ে উঠেছে একমাত্র যোগাযোগের ভরসা। তলিয়ে আছে এসব এলাকার ফসলের খেতও।

আগামী ২৪ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ১৭৬ টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা বিতরণ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন