জন্মহার কমছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ব্রিটিশ অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

১৯৩০ সালের পর যুক্তরাজ্যে গর্ভধারণের হার সর্বনিম্ন ছবি: শাটারস্টক

যুক্তরাজ্যে গর্ভধারণের হার জনসংখ্যা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় হারের তুলনায় কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির শিক্ষা, কর্মসংস্থান, জনশক্তির মান ও নাগরিকদের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষজ্ঞরা। একদিকে জন্মহার কমে যাওয়া, অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

সাম্প্রতিককালে সামর্থ্যের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন ও সরকারি পরিষেবার মান কমে যাওয়ায় ব্রিটিশ দম্পতিদের সন্তান জন্মদানের আগ্রহ কমে গেছে। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) তথ্যমতে, ২০২২ সালে ব্রিটেন ও ওয়েলসের গর্ভধারণের হার ১ দশমিক ৪৯-এ নেমে গেছে, যা জনসংখ্যা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় গর্ভধারণের হার ২ দশমিক ১-এর চেয়ে কম। ১৯৩০ সালে এ-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ শুরুর পর গর্ভধারণের এ হার সর্বনিম্ন। ২০১০ সাল থেকে দেশটিতে গর্ভধারণের হার কমে যেতে শুরু করে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ১৯৯০ সালের আগে জন্মগ্রহণ করেছে, এমন নারীদের অর্ধেক ৩০ বছর বয়সেও সন্তানহীন।

জন্মহার কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বলে অনুমান সংশ্লিষ্টদের। দেশটির অফিস অব বাজেট রেসপনসিবিলিটি (ওবিআর) বলছে, ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের কারণে কর সংগ্রহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। এটি এমন একটি সমস্যা, যার সমাধান অভিবাসনের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়।

যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ১৫ বছরের মধ্যে ৬৬ লাখ বেড়ে ৭ কোটি ৩৭ লাখে পৌঁছতে পারে। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে। অর্থাৎ দেশটির সম্পদ বাড়ছে না। ফলে ভবিষ্যতে দেশটির বাড়তি জনগণের মধ্যে তুলনামূলক কম সম্পদ ভাগ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কর আহরণ না বাড়লে জনগণকে পরিষেবা দিতে হিমশিম খাবে সরকারি সংস্থাগুলো।

জন্মহার কমার জেরে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বরাদ্দ কমার ঝুঁকিতে আছে। রেজল্যুশন ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ ১০০ কোটি ইউরোর বেশি কমতে পারে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

থিংকট্যাংক এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআর) তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমবে। ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে সেখানে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে।

এদিকে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় চাকরি নিয়ে শঙ্কায় আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও। কমে যেতে পারে শিক্ষক সংখ্যাও। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নীতিবিশ্লেষক লিন্ডসে ম্যাকমিলান বলেন, ‘‌শিক্ষকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ ত্বরান্বিত হবে।’

এর আগে ২০০০ সালের দশকে গর্ভধারণের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জন্মহার কমে যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা থাকছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন