সুপার এইটে চার দল, বাকি চার টিকিটের রেসে কারা?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত
Default Image

চলমান নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এরই মধ্যে ‘এ’ গ্রুপ থেকে ভারত, ‘বি’ গ্রুপ থেকে অস্ট্রেলিয়া, ‘সি’ গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ‘ডি’ গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সুপার এইট নিশ্চিত করেছে। সুপার এইটে যেতে পারবে আর চারটি দল। বিদায়ের ঝুঁকিতে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলংকা এবং ২০২১ আসরের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। এসব দলকে হতাশ করে সুপার এইটে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা নেদারল্যান্ডসের মতো দল। 

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড। ক্যারিবীয়দের জন্য ম্যাচটি ছিল সুপার এইট নিশ্চিত করার, কিউইদের জন্য টিকে থাকার। দুই দলের জন্যই স্নায়ুচাপের এ ম্যাচে কিউইদের ১৩ রানে হারিয়ে সুপার এইটে খেলা নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। আর এ হারে নিউজিল্যান্ডের বিদায় প্রায় নিশ্চিত 

হয়ে গেছে।

আগে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে ১৩৬ রান তুলতে সমর্থ হয়। 

খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি আর লকি ফার্গুসনরা তারুবার ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে যেন আগুন ঝরিয়েছেন। ৩০ রানের মধ্যে স্বাগতিকরা হারিয়ে ফেলে জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান, রোস্টন চেজ, রভম্যান পাওয়েল ও ব্র্যান্ডন কিংকে। ততক্ষণে ৩৯ বলের খেলাও শেষ। শীর্ষ তারকাদের সবাই যখন সাজঘরে, এর পরও ফেরা যায়? 

কঠিন বিপদে বুক চিতিয়ে লড়লেন শেরফান রাদারফোর্ড (৩৯ বলে ৬৮*)। আকিল হোসেন (১৭), আন্দ্রে রাসেল (১৪), রোমারিও শেফার্ড (১৩) ও গুডাকেশ মোতিকে (০) নিয়ে চারটি জুটি গড়ে দলকে এনে দেন ১৪৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ। মজার ব্যাপার হলো দশম উইকেটে মোতিকে নিয়ে ১৩ বলে ৩৭ রান তুললেও এর পুরোটাই ছিল রাদারফোর্ডের করা। এ সময় মাত্র ১২ বলে ৩৭ রান তুলে তিনি দলের সংগ্রহটা ভদ্রস্থ করেন। 

২ চার ও ছক্কায় করা রাদারফোর্ডের বীরত্বপূর্ণ ইনিংসে ভর করেই শেষ পর্যন্ত জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রাদারফোর্ডের পারফরম্যান্সে উদ্দীপ্ত হয়েই ক্যারিবীয় বোলাররাও জ্বলে ওঠেন। বিশেষ করে দুই স্পিনার মোতি (৩/২৫) ও আকিল হোসেন (১/২১) দারুণ বোলিংয়ে দলের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন। বাকিটা সেরেছেন পেসম্যান আলজারি জোসেফ। ফিন অ্যালেন, গ্লেন ফিলিপস, জেমস নিশাম ও টিম সাউদিকে সাজঘরে ফেরান এ পেসার।

শেষ তিন ওভারে ৫০ রান প্রয়োজন ছিল কিউইদের। উইকেটে ছিলেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার। ১৮তম ওভারে জোসেফকে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে খেলা জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দেন ফিলিপস। যদিও এরপর টানা দুই বলে ফিলিপস ও সাউদিকে আউট করে উত্তেজনায় সেখানেই জল ঢেলে দিলেন দীর্ঘদেহী এ পেসার। রোমারিও শেফার্ডের করা শেষ ওভারে স্যান্টনার তিন তিনটি ছক্কা মেরে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করলেও ততক্ষণে জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় কিউইদের। ১২ বলে ২১ রান করে শুধু হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছেন স্যান্টনার।

‘সি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইটের দ্বিতীয় টিকিটের জন্য আফগানিস্তানই ফেভারিট। কিউইদের পয়েন্ট শূন্য, আফগানিস্তানের ৪। আফগানিস্তানের নিট রানরেট +৫.২২৫, কিউইদের (-) ২.৪২৫। আজ ভোরে ত্রিনিদাদে পাপুয়া নিউগিনিকে হারালেই রশিদ খানের দল উঠে যাবে সুপার এইটে, বিদায় নেবে ২০২১ আসরের ফাইনালিস্টরা। 

নিউজিল্যান্ডকে সুপার এইটে উঠতে হলে তাদের পরের দুই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি আফগানিস্তানকে হারতে হবে পাপুয়া নিউগিনি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এখানেই শেষ নয়। আফগানিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে হারের পাশাপাশি কিউইদেরও জিততে হবে বিশাল ব্যবধানে। আফগানরা যদি দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১২০ রানের ব্যবধানে জিতে যায় তবে কিউইদের দুই ম্যাচ মিলিয়ে অন্তত ১৮৭ রানের ব্যবধানে জিততে হবে, যা অনেকটাই অসম্ভব।

‘এ’ গ্রুপ থেকে সবার আগে সুপার এইটে উঠে গেছে ভারত। বুধবার রাতে নিউইয়র্কে রোহিত শর্মার দলের কাছে ১০ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে হেরে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এ হারে পাকিস্তানের চেয়ে তাদের নিট রানরেট কমে গেছে। ফলে সুযোগ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের। এখন পাকিস্তান যদি শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে সুপার ওভারেও হারায় এবং আয়ারল্যান্ড যদি একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে হারায়, তবে পাকিস্তান সুপার এইটে উঠবে। আজ যুক্তরাষ্ট্র যদি আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যায়, তবে রোববার আয়ারল্যান্ডকে হারালেই পাকিস্তান পাবে সুপার এইটের টিকিট।

তবে পাকিস্তানের কপাল পুড়তে পারে খারাপ আবহাওয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র-আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড দুটি ম্যাচই হবে ফ্লোরিডার লাউডারহিলে। বৈরী আবহাওয়ায় এ দুটি ম্যাচের যেকোনোটি পণ্ড হলে যুক্তরাষ্ট্র উঠবে সুপার এইটে। তাদের ১ পয়েন্ট পেলেই চলে। আয়ারল্যান্ড ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ১ পয়েন্ট পেতে হবে কিংবা পাকিস্তান পয়েন্ট হারালেই সুপার এইটে উঠবে সহস্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।

‘বি’ গ্রুপে কর্তৃত্ব করে সুপার এইটে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। কঠিন সমীকরণের সামনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ওমান ও নামিবিয়াকে হারাতে হবে ইংল্যান্ডকে, সেই সঙ্গে ১৫ জুন শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হবে স্কটল্যান্ডকে। তিন ম্যাচ থেকে ৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে স্কটিশরা।

তবে ইংল্যান্ডের কাজটি কঠিন করে দিতে পারে নিট রানরেটের হিসাব। স্কটল্যান্ডের +২.১৬৪-এর বিপরীতে ইংল্যান্ডে নিট রানরেট (-) ১.৮০০। শেষ দুই ম্যাচে ওমান ও নামিবিয়াকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে ইংল্যান্ডকে। যেমন শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ড যদি ২০ রানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়, তবে ওমান ও নামিবিয়ার বিপক্ষে মোট ৯৪ রানের ব্যবধানে জিতলে স্কটল্যান্ডকে নিট রানরেটে টপকে যেতে পারবে ইংল্যান্ড! 

আবার বৈরী আবহওয়ায় কপাল পুড়তে পারে ইংলিশদের। তাদের যেকোনো একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলেই বিদায় নেবে তারা।

‘ডি’ গ্রুপের তলানিতে থাকা শ্রীলংকা তিন ম্যাচের দুটিতে হেরেছে, নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় পেয়েছে ১ পয়েন্ট। গ্রুপটি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সুপার এইটে উঠে গেছে। গতকাল সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ফল হয়ে থাকলে লংকানরা এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে। আর টাইগার-ডাচ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়ে থাকলে শ্রীলংকার আশাও নিবু নিবু জ্বলছে।

১৯ জুন সুপার এইট পর্ব শুরু। ২৭ জুন দুটি সেমিফাইনাল। ২৯ জুন ফাইনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন