গুঁড়িয়ে দেয়া হলো সাদিক এগ্রোর অবৈধ স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রোর অবৈধ অংশ গতকাল উচ্ছেদ করে ডিএনসিসি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল ও সড়কের জায়গায় গড়ে তোলা সাদিক এগ্রোর অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ১৫ লাখ টাকার খাসি ও কোটি টাকার ‘অভিজাত গরু’ নিয়ে আলোচিত এ খামারের অবৈধ অংশ উচ্ছেদে গতকাল অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ। 

উচ্ছেদের সময় খামারটির মালিক ইমরান হোসেনকে সেখানে দেখা যায়নি, যিনি বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। তবে অভিযানের শুরুতে খামারের আবাসিক কয়েকজন কর্মচারী বাধা দেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে দুপুর ১২টার দিকে ভাঙার কাজ শুরু হয়। ডিএনসিসির এক্সক্যাভেটর ও বুলডোজারসহ বিশেষ যান দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় সব অবৈধ স্থাপনা।

ডিএনসিসি বলছে, সাদিক এগ্রো লিমিটেড অবৈধভাবে খাল ও সড়কের জায়গা দখল করেছে। এছাড়া ওই অংশে রিকশার গ্যারেজ ও বস্তিঘরের মতো বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা ছিল। সেগুলোসহ মোট ৬০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। 

সাদিক এগ্রোর অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইমরান হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানাই। এ জমির মালিক আমি নই। আমি এ জায়গার একজন ভাড়াটিয়া। তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অন্য জায়গায় চলে যাব।’ 

এর আগে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য বুধবার চার প্লাটুন পুলিশ ফোর্স চেয়ে ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে একটি চিঠি দেয়া হয়। সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন আশপাশের অবৈধ স্থাপনাসহ খাল ও সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক এগ্রো লিমিটেডের স্থাপনা অপসারণ করা হবে। এ খবর জানার পরই গতকাল রাত থেকেই সাদিক এগ্রোর গরুগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। সেই সঙ্গে অস্থায়ী কিছু স্থাপনাও সরিয়ে নিয়েছে তারা। উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে খাল ভরাট করে তৈরি বস্তির বাসিন্দারাও তাদের ঘরের ছাউনির টিন ও বাঁশ-কাঠ খুলে ফেলতে শুরু করেন।

ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ অভিযানের সময় বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়নি। খালের জায়গার ওপর যারাই স্থাপনা করবে, সেসব ভেঙে দেয়া হবে। সাদিক এগ্রোর স্থাপনার কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সেগুলোই ভাঙা হয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার তাদের নোটিস দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা আমলে নেয়নি।’ 

এদিকে গতকাল অনুষ্ঠান শেষে সাদিক এগ্রোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‌যখন যেটা নজরে আসে তখন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সব কাজ তো সরকার একদিনে করতে পারে না। সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান কার্যক্রমেরই অংশ।’

এবারের কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো এক ছাগল নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসে সাদিক এগ্রো। সেই ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে এক তরুণ। পরে জানা যায়, ওই তরুণের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর তিনি হারান এনবিআরের পদ, সরে যেতে হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও। এরই মধ্যে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন