লক্ষ্মীপুরে প্রকৃত কার্ডধারীরা পাচ্ছেন না টিসিবির পণ্য

মো. রাকিব হোসাইন রনি, লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন ডিলারের লোকজন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সারা দেশে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ডিলারের দোকান বা নির্ধারিত স্থানে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করলেও লক্ষ্মীপুরে প্রকৃত কার্ডধারীরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাদের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রকৃত কার্ডধারীদের পণ্য না দিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের লোককে সুযোগ করে দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো মেম্বার কার্ডধারীদের পণ্য কিনতে না দিয়ে নিজেই একাধিক কার্ডধারীর পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এসব অনিয়ম দূর করতে এবং প্রকৃত কার্ডধারীর পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দিলেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না।

নিয়মানুযায়ী একজন কার্ডধারী ৪৭০ টাকায় দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল পাবেন। তবে লক্ষ্মীপুরে ফ্যামিলি কার্ড থাকলেও পণ্য পাচ্ছেন না সুফলভোগীরা। কার্ডধারী নুসরাত জাহান ও সুবর্ণা বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদসহ তিনটি বিক্রয় কেন্দ্রে অনিয়ম দেখা গেছে।

বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় তদারকি কর্মকর্তা সদর উপজেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট আব্দুর রহিমকেও পাওয়া যায়নি। সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘গতকাল দত্তপাড়া ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা ডিলার তাকে জানাননি।’

তবে ডিলার এমএ মালেক বলেন, ‘তদারকি কর্মকর্তা পণ্য বিক্রির সময় ঠিকমতো আসেন না এবং থাকেনও না।’ তিনি দাবি করেন, যারাই কার্ড নিয়ে আসেন, তাদেরই নির্ধারিত দামে নির্দিষ্ট পণ্য বুঝিয়ে দেন। কার পণ্য কে নিচ্ছেন, সেটা তাদের দেখার সুযোগ হয় না।

সরেজমিন দেখা গেছে, দত্তপাড়া গ্রামের মধু সর্দার বাড়ির রুহুল জামিলের কার্ড নিয়ে পণ্য কিনতে এসেছেন একই গ্রামের সওদাগর বাড়ির টিপু হোসেন। এছাড়া রিপুজি বাড়ির শাহীনের কার্ড নিয়ে এসেছেন সওদাগর বাড়ির আলী আকবর নামের অন্য এক ব্যক্তি। একইভাবে হোছনেয়ারা বেগমের কার্ড নিয়ে এসেছেন দেলোয়ার হোসেন, ধোপাবাড়ির নূরনবীর কার্ড দিয়ে পণ্য নিচ্ছেন সদাগরবাড়ীর সেলিম।

কার্ডধারী পলি মজুমদারের স্বামী শ্যামল মজুমদার, নাজমুন্নাহার, সুজিয়া বেগম, পেয়ারা বেগম, হাছিনা আক্তার, সুবর্ণা, নাছিমা বেগম ও হাছিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘তিন বছর ধরে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি হলেও অনেকেই এক-দু’বারের বেশি পণ্য কেনার সুযোগ পাননি। পণ্য কেনার সময় কার্ড রেখে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ইউপি মেম্বাররা প্রকৃত কার্ডধারীদের কার্ড না দিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের দিয়ে দেন।’

কার্ডধারী সুবর্ণা জানান, তিনি তার কার্ডটি ফেরত পেতে বারবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও কার্ড ফেরত দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দত্তপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইউনিয়নে টিসিবির কার্ডধারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৭৬ জন। কাজ করতে গেলে একটু অনিয়ম তো করাই লাগে। তবে কেউ অভিযোগ করলে তার কার্ড বাতিল করে দেয়া হবে। একজন বারবার পণ্য কিনবে। বাকিরা বাদ যাবে—এটা তো মেনে নেয়া যায় না।’

শুধু দত্তপাড়া ইউনিয়নে নয়। একই চিত্র দেখা গেছে সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে। উপজেলার হাজিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম বাবুল, বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল রহমান, টুমচর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন লোলা ও চর রমণিমোহন ইউপি চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়াল অনিয়মের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তবে তারা নিজেরা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন। মেম্বাররা কিছু কিছু অনিয়ম করেন বলে জেনেছেন তারা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কারো কার্ড ইউপি চেয়ারম্যানরা বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না। একজনের কার্ড তাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। পণ্য কেনার পর কার্ড ক্রেতাকেই ফেরত দেয়ার কথা। ইউনিয়ন পরিষদে জমা রাখারও বিধান নেই। পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন