সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

সুরমা—কুশিয়ারার ৫টি পয়েন্ট এখনো বিপৎসীমার ওপরে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

ছবি : বণিক বার্তা

সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৫টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কেবল সারি গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে পানি। বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমেছে। যার জন্য অল্প অল্প করে পানি নামছে। সুরমার পানি যত কমবে, নগরীর নিচু এলাকার পানিও নেমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাতের হার কমে এসেছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে এখনো জেলার ১৩টি উপজেলাসহ সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ডের ৮ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে ১২৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮০ সেন্টিমিটার, নদীর সিলেট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৮৭ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০১ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো পয়েন্টে গত দিনের তুলনায় অল্প পানি কমেছে। 

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। এছাড়া ৬২৭ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৩শ মানুষ কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। সিলেট নগরীতে ৩ হাজার বন্যার্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। জেলার সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বন্যার পানির বিস্তৃতি ঘটেছে।

সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা ঘুরে দেখা যায়, বাসা—বাড়িতে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গরু—মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার মানুষজন।

অন্যদিকে আক্রান্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে তিনটি উপজেলায় হাসপাতাল চত্ত্বরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েন রোগী, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ তিনটি স্থান হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে পানি বেশি সময় না থাকায় পুনরায় সেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিলেট জেলাজুড়ে ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। উপজেলাগুলোর মধ্যে বিয়ানীবাজারে ১৬টি, কানাইঘাটে ১২, গোলাপগঞ্জে ১২, জকিগঞ্জে ১০, গোয়াইনঘাটে ১০, কোম্পানীগঞ্জে ১০, বিশ্বনাথে ৯, সিলেট সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, ওসমানীনগরে ৯, বালাগঞ্জে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৬ ও জৈন্তাপুরে ৬টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে আরো দুটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি ছিল। এখন হাসপাতালের ভেতর থেকে পানি নেমে গেলেও চত্ত্বরে রয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্ত্বরেও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি উঠেছে। তিনি জানান, মুলত মঙ্গলবার (১৮ জুন) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।

তিনি জানান, হাসপাতালের ভেতরে পানি উঠে পড়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভ্যাকসিনগুলো সরিয়ে জেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পানি নেমে গেছে, তবে চত্ত্বরে রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সজিব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১০.২ মিলিমিটার। সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে হয়েছে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত কমলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির ওপর সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করছে। কারণ, ভারতের পাহাড়ি ঢলেই সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ জন্য চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। 

তিনি বলেন, সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসা এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হওয়ার প্রভাব সিলেটের নদ—নদীগুলোয় পড়েছে। এতে পানির স্তর অল্প অল্প করে নামছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, কিছু কিছু উপজেলায় সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে কিছুটা কমেছে তবে উন্নতি বলা যাবে না। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ পৌছে দেয়া হচ্ছে। তিনি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার (১৭ জুন) থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে ফের জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন