সহায়তা নয়, বাংলাদেশ এখন ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব চায় : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

বিদেশীদের কাছে সহায়তা নয়, বাংলাদেশ এখন ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন এটা অনেক বড় অর্জন। আর এটা সম্ভব হয়েছে এ দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য। তারা যদি সাহসী না হতো, তাহলে আমরা এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না।

মঙ্গলবার (১৪ মে) ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাব্য উপায়’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে আমরা একক কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। বিভিন্ন দেশে থেকে আমদানি করতে চাই। আগে আমদানিকে গুরুত্ব দেয়া হতো না। এখন রফতানিকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়, আমদানিকেও একইরকম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। রফতানির ক্ষেত্রে যেমন আমাদের বিভিন্ন মার্কেট প্রবেশ করতে হবে, একইভাবে আমদানিকেও বৈচিত্র্যময় করতে হবে। 

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারে, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা (ব্যবসায়ীরা) সফল হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সফল হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের উপপ্রধান জ্যান জ্যানোভোস্কি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে জার্মান ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিভিন্ন রকম মাশুল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জার্মান বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। গত দুই বছরে বাংলাদেশে জার্মানি কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জার্মান উভয় দেশের আরো কাজ করার আছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জার্মান বিনিয়োগকারীরা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন জানিয়ে জ্যান বলেন, চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে জার্মানির অনেক কোম্পানি নিজেরাই কর্মপন্থা ঠিক করছে। চীন থেকে সরে এসে জার্মানি উৎপাদনের জন্য নতুন কেন্দ্র খুঁজছে। এটি চায়না প্লাস ওয়ান হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ সেই প্লাস ওয়ান হতে পারে।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এ দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না; এ জন্য ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সবক্ষেত্রে অটোমেশন প্রয়োজন। নানাবিধ জটিলতার কারণে বাংলাদেশ যেমন সহজে ব্যবসার সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ব্যবসার খরচও বেড়ে যাচ্ছে এখানে। বিডার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করে গেলেও একই সেবা অন্যখানে পেতে বিলম্ব হয়। সব সেবা এক দরজায় পাওয়া গেলে দেশের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ আরো বাড়বে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম শীর্ষ বাজার জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বাজার এখন আর দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এই বাজারের আকার এখন প্রায় ২০ কোটির। ২০৩০ সালের মধ্যে এ দেশ ২৩তম শীর্ষ বাজার হবে।

অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স ও ডকুমেন্টস প্রদানে সরকারি সংস্থাগুলোর আরো উদার হওয়া উচিৎ। এ ব্যবস্থা আরো সহজীকরণ করা দরকার। একইসঙ্গে লাইসেন্সের মেয়াদ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

ড. মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা ডিজিটালাইজেশনের কথা বলি। কিন্তু ডিজিটাইলেশন কখনো অর্ধেক বা আংশিক হতে পারে না। এ পদ্ধতি পুরোপুরি অনলাইন ভিত্তিক হওয়া উচিৎ। যাচাইবাছাই এখনো সনাতন পদ্ধতিতে করা হয়। অথচ চাইলেই এটি ডিজিটালি করা যায়।

অনুষ্ঠান শেষে এফবিসিসিআই, সিপিডি ও জার্মান ভিত্তিক ব্যবসায় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান জিআইজেডের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।  এ সময় দেশের ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন