নিম্ন জন্মহার

রাজধানীর বাইরে জনবিন্যাস ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে জাপান

বণিক বার্তা ডেস্ক

জাপানের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো ঋণাত্মক জন্মহার ছবি: রয়টার্স

এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতির দেশ জাপানের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো ঋণাত্মক জন্মহার। পাশাপাশি রাজধানী পৌরসভা জনবিন্যাসের বৈপরীত্য নিয়েও চাপে রয়েছে দেশটির সরকার। বিষয়ে গত এক দশকে একাধিক পরিকল্পনা নেয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য মেলেনি। দেশটির বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞদের এক প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক উদ্যোগের সাফল্য ব্যর্থতার তুলনামূলক চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে জাপানের পৌরসভা অঞ্চলে প্রায় ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা কমে যাওয়াকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর জাপান টাইমস।

জাপানে নিম্ন জন্মহার জনবিন্যাসের সমস্যাটি নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০১৪ সালে অন্য একটি দল অনুরূপ পূর্বাভাস দিয়েছিল। তখন সরকারআঞ্চলিক পুনরুজ্জীবন নামের উদ্যোগের মাধ্যমে টোকিওর জন্মহার বাড়ানো অতিরিক্ত জনঘনত্ব মোকাবেলায় উদ্যোগ নেয়। কিন্তু উদ্যোগেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি মেলেনি। বিশেষ করে জনসংখ্যা স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাতে জন্মের সংখ্যা কমতে থাকে।

জাপানের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনসংখ্যা কৌশল পরিষদ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ভাইস চেয়ারম্যান হিরোয়া মাসুদা নিম্ন জন্মহারপ্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্রাসমান জন্মহারে পৌরসভা এলাকার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। দেশব্যাপী জন্মহার বৃদ্ধি ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না।

প্রবণতা উল্টে দিতে আরো জোরালো প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অতীত চলমান সরকারী প্রকল্পগুলো তরুণ নারীদের একটি অংশের জন্য বিশেষ কোনো উপকারে আসেনি।

গত এক দশকে গ্রামীণ এলাকার তরুণদের স্থায়ী বসবাসের জন্য প্রণোদনা নীতি গ্রহণ করে সরকার। পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ এলাকায় কিছু সরকারি দপ্তর স্থানান্তর, ছোট শহরে অভিবাসনে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি টোকিও থেকে দূরে সদর দপ্তরের জন্য ব্যবসায়ীদের কর প্রণোদনা।

কিন্তু জনসংখ্যা কৌশল পরিষদ প্যানেল বিশ্লেষকরা উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরে বলেন, ‘কিছু এলাকায় কাছাকাছি পৌরসভাগুলো তরুণ বাসিন্দাদের ধরে রাখার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

গত ১০ বছরে জাপানের জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৩০ লাখ। কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে কমেছে বিয়ে। ২০২২ সালে মোট বার্ষিক জন্মসংখ্যা আট লাখের নিচে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালে জনসংখ্যা সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান ২০৩৩ সাল নাগাদ আট লাখের নিচে জন্মসংখ্যার পূর্বাভাস দিয়েছিল, অর্থাৎ এক দশক আগেই সেই মাইলফলকে পৌঁছে গেছে জাপান।

অন্যদিকে টোকিওতে জনঘনত্ব কমানোর প্রচেষ্টার সাফল্য খুবই সীমিত। প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালে গ্রামীণ অঞ্চল টোকিওর মধ্যে জনসংখ্যাপ্রবাহের মধ্যে ভারসাম্য অর্জনে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্য দুবার স্থগিত করা হয়েছে।

মহামারীর সময় কিছু বাসিন্দাথ্রি সিএস নামের পরিচিত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়াতে টোকিও থেকে দূরে সরে যায়। তবে সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে টোকিওর বাইরে চলে যাওয়া লোকদের চেয়ে বেশি রাজধানীতে প্রবেশ করছে, যা প্রাক-মহামারী স্তরের কাছাকাছি।

হিরোয়া মাসুদা গ্রামীণ এলাকা থেকে বড় শহরে যুবকদের অভিবাসনের অব্যাহত প্রবণতা তুলে ধরে বলেন, ‘জন্মহার বাড়ানোর জন্য পৌরসভারগুলোয় তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষ পাঠানো জরুরি। জন্মের চেয়ে মৃত্যু বেশিএভাবে জনসংখ্যা হ্রাসের যে প্রবণতা তাকে মোকাবেলার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে সরকারি উদ্যোগের কিছু সাফল্য দেখা যাচ্ছে। ২০১৪ সালের তালিকায় ২৩৯টি পৌরসভা জনসংখ্যা একদম কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। কিন্তু সেই ঝুঁকি কমে গেছে। ৬৫টি পৌরসভা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত স্বনির্ভরতা স্থায়িত্ব বজায় রাখতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে ২০-৩৯ বছর বয়সী নারীর সংখ্যাকমলেও তা বর্তমান স্তরের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি নয়।

শিমানে প্রিফেকচারের সাফল্যের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। সেখানে ১২টি পৌরসভাকে আর বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে বিবেচনা করা হয় না। আঞ্চলিক পুনরুজ্জীবনে সরকারি আন্তরিকতার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারগুলোও নড়েচড়ে বসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন