বিশ্বজুড়ে রেমিট্যান্স পাঠানোয় বড় বাধা অতিরিক্ত ফি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফি কমলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোয় আগ্রহী হয়ে উঠবেন প্রবাসীরা ছবি: এপি

বৈশ্বিক শ্রমবাজারের টেকসই উন্নয়নে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘ। এর অংশ হিসেবে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ছয় বছরের মধ্যে ফির হার ৩ শতাংশে কমিয়ে আনা হলো লক্ষ্য। তা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে দেশে বা পরিবারের কাছে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে এখনো প্রবাসীদের বড় ধরনের ফি দিতে হচ্ছে। খবর বিবিসি।

উগান্ডার কাম্পালায় ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন জেরি লুকেন্দো এমবোক। তার বাড়ি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। দেশে বৃদ্ধ মাকে অর্থ পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হয় বলে জানান জেরি। তার তথ্যানুযায়ী, ১০০ ডলার পাঠানোর জন্য খরচ করতে হয় অতিরিক্ত ৩ ডলার। আবার রেমিট্যান্স ওঠানোর জন্য মাকে অতিরিক্ত ৭ ডলার পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে ১০০ ডলারের রেমিট্যান্সে মোট খরচ ১১০ ডলার।

বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য জেরি লুকেন্দো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। সাধারণত ব্যাংক, পোস্ট অফিস বা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মতো লেনদেন কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর জন্য ১০ শতাংশ ফি দিতে হয়।

অর্থ পাঠানো ছাড়াও জাতিসংঘ দুই দেশের মধ্যে লেনদেন ফি ৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে কাজ করছে। কিছু গবেষকের মতে, এ উদ্যোগ কার্যকর হলে সুফল পাওয়া যাবে। তবে প্রথমে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি ৩ শতাংশেরও কম করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, এ উদ্যোগের মাধ্যমে সরাসরি খরচ কমানোর পাশাপাশি ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। কেননা ফি কমলে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোয় আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আর যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভালো প্রভাব রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত খরচের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকায় অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যয়ের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, অঞ্চল ও দেশভেদে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি কম-বেশি হতে পারে। ডিজিটাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ওনাফ্রিকের গ্রুপ প্রধান নিকা নাগাভি জানান, আফ্রিকার কোনো পেমেন্ট কোম্পানি চাইলেই বিভিন্ন দেশে একক লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও অবাধে লেনদেন করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ নাগাভি জানান, টোগো ও বেনিনের মুদ্রা এক হওয়ায় সহজে লেনদেন করা যায়। কিন্তু চাইলেও ঘানা ও টোগোর মধ্যে লেনদেন করা যায় না। এ কারণেই অর্থ পাঠাতে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পার্শ্ববর্তী দেশে ৫০ ডলার বা তার কম অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে অবশ্য ফির পরিমাণ কম। তবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সরকারের কঠোর নিয়মের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করতে হয়। অভিবাসী বিষয়ক সংস্থা দ্য মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ইউরোপের পলিসি অ্যানালিস্ট রাভেনা সোহস্ট জানান, নতুন কোনো কোম্পানি যদি এ বাজারে প্রবেশ করতে চায় তাহলে প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ও আইনি বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। বিষয়টি আয়ত্ত আনার ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে মাত্র কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে।

সোহস্ট জানান, রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় করিডোর। সেখানে প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় ফির হার কম। প্রতিযোগিতা কম থাকলে কোম্পানিগুলো তাদের ফি সম্পর্কে সেভাবে তথ্য প্রকাশ করে না। ইউএন ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিট্যান্স প্রোগ্রামের জেন্ডার ও লার্নিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন উলোমা ওগবা। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কোম্পানি যেমনভাবে চায় সেভাবে গ্রাহকদের কাছে তথ্য উপস্থাপন করে।’

সব মিলিয়ে জাতিসংঘ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করলেও এখনো পুরোপুরি সুফল পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন