চীনের বাজারে বাড়ছে সিঙ্গাপুরের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

বিদেশী বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক উদ্যোগকে সমর্থন জানাতে সম্প্রতি অবকাঠামো ও নীতিগত সুবিধা বিস্তৃত করেছে চীন। শ্রমশক্তি ও ভোক্তার সংখ্যায়ও এগিয়ে রয়েছে দেশটি। এশিয়ার বৃহত্তম এ অর্থনীতি ভূরাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন পক্ষ থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এর বিপরীতে ব্যবসায়িক সুবিধাগুলো অনেক দেশের কাছে এখন লোভনীয়। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চীনকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে এশিয়ার আরেক দেশ সিঙ্গাপুর। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলোকে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা দেয় এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর (এন্টারপ্রাইজএসজি)। গত দুই বছরে তিন শতাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের বাজারে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি বাড়াতে সাহায্য করেছে সরকারি সংস্থাটি। 

চীনের প্রতি সিঙ্গাপুরের সাম্প্রতিক এ আগ্রহ নিয়ে এন্টারপ্রাইজএসজির নির্বাহী পরিচালক (চীন) সিম চুন সিওং বলেন, ‘চীনে শক্তিশালী সরবরাহ চেইন অবকাঠামো ও দক্ষ কর্মী বাহিনী রয়েছে। এখানে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে নতুন কাজের সুযোগ রয়েছে।’

চীনের বাজারে প্রবেশের জন্য ২০২৩ সালে ২৫০টি সংস্থা এন্টারপ্রাইজএসজির মার্কেট রেডিনেস অ্যাসিস্ট্যান্স গ্র্যান্ট নামের সহায়তা পেয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

সাংহাই ও চেংদুর সিঙ্গাপুর চায়নিজ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিঙ্গাপুর এন্টারপ্রাইজ সেন্টারের সঙ্গে কাজ করছে এন্টারপ্রাইজএসজি। সিম চুন সিওং জানান, চীনের বাজার সম্পর্কে সিঙ্গাপুরে আগ্রহ বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে এ ধরনের অনুসন্ধান ছিল ৫০ শতাংশ বেশি।

চীনে বাজারের নতুন উপস্থিতি ও ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) প্রধান নির্বাহী কোক পিং সুন। তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি প্রতিযোগিতামূলক বা তুলনামূলক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে নয়, এখন ভূরাজনৈতিকভাবে যুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ বরাদ্দ ও বাণিজ্যপ্রবাহ আরো বেশি কেন্দ্রীভূত হয়ে উঠছে। এর মধ্যে চীন এখনো সিঙ্গাপুরের অনেক কোম্পানির জন্য আসিয়ানের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার।’

বিদেশী কোম্পানি ও বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য সম্প্রতি নীতিগত সুবিধা প্রবর্তন করেছে বেইজিং। এর মধ্যে বাজারে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ ও উৎপাদন খাতে বিদেশী বিনিয়োগের বাধা দূরীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে পরিষেবা খাতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো সুবিধা পাচ্ছে। 

কোক পিং সুন জানান, নির্মাণ, খুচরা ও পাইকারি, স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তি পরিষেবার মতো কোম্পানি বিদেশী ইকুইটি সীমার অধীন হবে না। বরং সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারী ও পরিষেবাদাতারা সংশোধিত চুক্তির অধীনে আরো উদার ও স্বচ্ছ নিয়ম উপভোগ করবেন।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন কভিড-১৯-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নানাভাবে হোঁচট খেলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পূর্বাভাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। রয়টার্স জরিপে বিশ্লেষকরা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও এ প্রান্তিকে অর্থনীতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ডুরাপাওয়ার হোল্ডিংস চীনে বিস্তৃত পরিসরে ব্যবসা করছে। গত মার্চে সুঝোতে একটি ৩২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের কারখানা তৈরি করেছে, যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হবে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেলভিন লিম বলেন, ‘এ সম্প্রসারণ ডুরাপাওয়ারকে চীনা ও আঞ্চলিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংক চীনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। দেশটির ১৪টি শহরে ১৬টি শাখা ও উপশাখা চালু করেছে। ওসিবিসি চীনের প্রধান নির্বাহী আং ইং সিওং জানান, আসিয়ান সদস্যকে সুযোগ দিয়ে থাকে চীন। সে সুযোগ কাছে লাগাচ্ছে সিঙ্গাপুর।

তিনি বলেন, ‘অঞ্চল হিসেবে আসিয়ান চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আসিয়ান বৃহত্তর চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগপ্রবাহ আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগানো আমাদের করপোরেট কৌশলের মূল স্তম্ভগুলোর অন্যতম।’

সিঙ্গাপুরকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো আসিয়ান দেশে কাজ করে এমন চীনা কোম্পানিগুলোকে পরিষেবা দেয় ওসিবিসি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে বলেছিল, আসিয়ান ও বৃহত্তর চীনকে লক্ষ রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে আয় ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায়। 

আং ইং সিওং জানান, কর্মীর প্রাচুর্য চীনে বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে দেশটির শ্রমশক্তি ৮০ কোটির বেশি। ২০২৪ সালে এখানকার প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করবেন।

তিনি বলেন, ‘চীন গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতেও প্রস্তুত। এখানে বিনিয়োগের প্রধান দিক হলো ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতি। চীনের শক্তিশালী উৎপাদনক্ষমতা ও বিস্তৃত ভোক্তা বাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন