পশ্চিমা চাপে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে অস্বীকৃতি চীনা ব্যাংকের

বণিক বার্তা ডেস্ক

জানুয়ারির মাঝামাঝিতে রুশ ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানায় চীনা ব্যাংক ছবি: রয়টার্স

পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বরাবরই রাশিয়ার পক্ষে নমনীয় অবস্থান দেখিয়ে আসছে চীন। কিন্তু কিছু নিষেধাজ্ঞা সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের আর্থিক লেনদেনকে প্রভাবিত করছে। বিষয়টি স্বীকার করে ক্রেমলিন বলছে, রাশিয়া থেকে অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীনের কিছু ব্যাংক। খবর রয়টার্স।

মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য তুরস্ক চীনের ব্যাংকগুলোকে সেকেন্ডারি বা পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরই আওতায় দেশ দুটির ব্যাংকের মধ্যে সাম্প্রতিক জটিলতার শুরু বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

বিষয়টিকেনজিরবিহীন অভিহিত করে বলা হয়, লেনদেনের সমস্যার শুরু হয় জানুয়ারির মাঝামাঝিতে। ওই সময় রুশ ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানায় চীনা ব্যাংক। তখনই বিষয়টি মীমাংসার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রুশ ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবেদন অনুসারে, প্রথমে চীনা ব্যাংকগুলো ডলারে লেনদেন করতে অস্বীকৃতি জানায়। কেননা মার্কিন কর্তৃপক্ষ ধরনের লেনদেন সহজে চিহ্নিত করতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে গত মাসে রাশিয়া বেলারুশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় চৌঝো কমার্শিয়াল ব্যাংক। এরপর ইউয়ানে লেনদেন বন্ধের পদক্ষেপ নেয় অন্য ব্যাংকগুলো।

বিষয়ে গতকাল রুশ কর্তৃপক্ষের মন্তব্য প্রকাশ করে দেশটির সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়া। সেখানে বাজার সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, চীনের পিং আন ব্যাংক ব্যাংক অব নিংবো রাশিয়ার সঙ্গে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ডিবিএস ব্যাংক, গ্রেট ওয়াল ওয়েস্ট চায়না ব্যাংক চায়না ঝেশাং ব্যাংক রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ চালু করেছে।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। সঙ্গে এও বলছেন, তারা সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন। চীন রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়টি সামনে এনে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভূতপূর্ব চাপ অব্যাহত রয়েছে।

মস্কো বেইজিং নতুন বাধা অতিক্রম করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে, তাও স্বীকার করেন নেন। দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘অবশ্যই, বিধিনিষেধ কিছু সমস্যা তৈরি করেছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

ইজভেস্তিয়ার প্রতিবেদনে অনুসারে, রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো নিষেধাজ্ঞা অতিক্রমের উপায় খুঁজতে কাজ করছে। প্রায় ৮০ শতাংশ রুশ প্রতিষ্ঠান চীনের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই এমন বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে শাখা খুলে তারা লেনদেন করে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা হুমকি উপেক্ষা করে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এরপর একাধিকবার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধের শিকার হয় মস্কো। সময় রাশিয়া থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় পশ্চিমা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তা সত্ত্বেও রুশ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে রাশিয়ার উপস্থিতি। যুদ্ধের আগে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের মূল ক্রেতা হিসেবে ইউরোপ থাকলেও তখন সামনে চলে আসে চীন। একই সময় থেকে দেশ দুটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক দেখিয়ে আসছে। এমনকি নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝে ২০২৩ সালে চীন সফর করেন ভ্লাদিমির পুতিন। বিভিন্ন ফোরামে বেইজিংয়ের সহযোগিতা পেয়েও আসছে মস্কো।

পরিস্থিতি চীনের রফতানি বাণিজ্যের জন্যও সহায়ক হয়েছে। রাশিয়া থেকে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো সরে আসার পর সে স্থান দখল করে নেয় চীন। এর আগে চীনা গাড়ি রফতানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল ইউরোপ, এখন সে স্থান দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি মস্কোয় চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং হানহুই জানান, দ্বিপক্ষীয় লেনদেন দুই দেশে ২৪ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন