দ্রুত প্রবৃদ্ধির ভারতকে ঘিরে বিশ্লেষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ভারত ছবি: রয়টার্স

২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিক শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শেষ করেছে ভারত। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এ অর্থনীতিতে জিডিপি অক্টোবর-ডিসেম্বরে বছরওয়ারি ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে, যা অন্য যেকোনো অর্থনীতির তুলনায় বেশি। এর আগে জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশটির পরিসংখ্যান অফিসের দেয়া এসব তথ্যের বিশ্লেষণ করে কিছু সতর্ক পরামর্শও দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খবর সিএনএন।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অর্থনীতির এ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ থামাশি ডি সিলভা বলেন, ‘‌ভারত চমকের মাধ্যমে বছরটি শেষ করেছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে গত প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।’

প্রবৃদ্ধির এ তথ্য বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। রিয়েল এস্টেট বিষয়ে পরামর্শক নাইট ফ্র্যাঙ্কের এক প্রতিবেদন অনুসারে, অতিধনী ভারতীয়দের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের নিট সম্পত্তির মূল্য কমপক্ষে ৩ কোটি ডলার। আগামী পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২৮ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ হারে বাড়বে। বৈশ্বিক হিসাবে এটি হবে অতিধনীদের সম্পদের সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রসারিত হবে। যদিও মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

সম্প্রতি মাইক্রো ব্লগিং প্লাটফর্ম এক্সে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘‌জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতির শক্তি ও এর সম্ভাবনা প্রতিফলন করে। আমাদের প্রচেষ্টা দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, যা ১৪০ কোটি ভারতীয়ের উন্নত জীবনযাপনে সহায়তা করবে।’ 

বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত। বলা হচ্ছে, টেকসই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে দিতে পারে। বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেফরিস গ্রুপের বিশ্লেষকরা আশা করছেন, দেশটি ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। সম্প্রতি জাপানকে পেছনে ফেলে এ স্থান দখল করে নিয়েছে জার্মানি।

ভারতের অর্থনীতির এমন প্রবৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার উত্তেজনাকর সম্পর্কে বিকল্প হিসেবে সামনে আসে ভারতের নাম। এখন বৈচিত্র্যকরণ নীতি অনুযায়ী পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান চীনের বিকল্প হিসেবে ভারতকে বেছে নিচ্ছে। সে সুযোগ কাজে লাগাতে এরই মধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে অ্যাপল, টেসলা, গুগলের মতো জায়ান্টগুলো ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশটিতে কারখানা স্থাপনের জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। সড়ক, বন্দর, বিমানবন্দর ও রেলপথের উন্নয়ন করতে বিলিয়ন বিলিয়ন খরচ করছে।

অ্যাপলের সরবরাহকারী ফক্সকনসহ বিশ্বের কয়েকটি বড় কোম্পানি এরই মধ্যে ভারতে কার্যক্রম প্রসারণ করছে। টেসলার সিইও ইলোন মাস্ক গত জুনে বলেছিলেন, তার কোম্পানি ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছে।

সম্প্রতি টাটা গ্রুপসহ কয়েকটি সংস্থাকে তিনটি সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট নির্মাণের জন্য দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে মোদি সরকার। ভারতকে ইলেকট্রনিকস হাবে পরিণত করার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ এটি। এ কারখানাগুলো ২০ হাজার নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়া পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে ৬০ হাজারেরও বেশি। বিনিয়োগটি ভারতের সেমিকন্ডাক্টর উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য একটি ‘বিশাল লাফ’।

সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ঘিরে উচ্ছ্বাস থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিবিদরা সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নোমুরা হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সব চাকচিক্যই প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে না। প্রবৃদ্ধিকে যত বড় করে দেখানো হচ্ছে, তাতে আড়াল পড়ে যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতির দুর্বলতা।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশটিতে ভোক্তা ব্যয় কাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে না। ভারতের জিডিপিতে ১৬ শতাংশ অবদান কৃষি খাতের, কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎসও এটি। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তুষ্টজনক নয়। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী গতি পেলেও শিল্পোৎপাদন ও নির্মাণ খাতের গতি ছিল আগের প্রান্তিকের চেয়ে ধীর।

সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের ডি সিলভাও। কারণ দুর্বল বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ভারতের রফতানি বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া ঋণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ পারিবারিক ব্যয়কে সীমিত করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন