বিমানবন্দরে আরো ৬০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে আদানি গ্রুপ

বণিক বার্তা ডেস্ক

বর্তমানে ভারতের আটটি বিমানবন্দরের পরিচালনার দায়িত্বে আছে আদানি গ্রুপ ছবি: রয়টার্স

বিমানবন্দরভিত্তিক ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা জানিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ। রানওয়ে ও নতুন টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে ১০ বছরে আরো ৬০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে গুজরাটভিত্তিক কনগ্লোমারেটটি। সম্প্রতি আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করণ আদানি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর ইকোনমিক টাইমস।

বিমানবন্দর পরিষেবা খাতে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ নতুন নয়। এরই মধ্যে নাভি মুম্বাই বিমানবন্দরে ১৮ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নতুন পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত নয়। এতে রানওয়ে ও টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি রয়েছে বিমানবন্দরের নিকটবর্তী শহরের উন্নয়ন। এর আওতায় নির্মাণ হবে হোটেল ও শপিংমল।

আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির ছেলে করণ আদানি। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে উড়োজাহাজ পরিষেবায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। সে সুযোগ কাজে লাগাতে চায় আদানি গ্রুপ। করণ আদানি বলেন, ‘আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে উড়োজাহাজ পরিষেবায় মৌলিক পরিবর্তন আসবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছি। এর মাধ্যমে আকাশপথে ভারতের শহরগুলোর মধ্যে সরাসরি সংযোগ বাড়াব।’ 

২০১৯ সালে আদানি গ্রুপ ভারতজুড়ে ছয়টি বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পায়। এগুলো হলো লক্ষ্ণৌ, আহমেদাবাদ, জয়পুর, গৌহাটি, থিরুভানান্তপুরম ও ম্যাঙ্গালোর। ২০২১ সালে জিভিকে গ্রুপের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে মুম্বাই ও নাভি মুম্বাই বিমানবন্দর। এখন এ খাতে সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০৪০ সালের মধ্যে অধীনস্থ বিমানবন্দরে ২৫-৩০ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করতে চায় আদানি গ্রুপ। বর্তমানে সাতটি সচল বিমানবন্দর বার্ষিক ৭ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারে।

এ বিষয়ে আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ বনসাল বলেন, ‘১৪০ কোটি ভারতীয়ের মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি বর্তমানে আকাশপথে পরিষেবা গ্রহণ করে। কিন্তু শিগগিরই এটা বাড়বে। ভারতীয় উড়োজাহাজ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ বাড়াচ্ছে। আমরা আগামী বছর নয়, ২০৩৩-৩৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আদানি গ্রুপের আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় আয় হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি রুপির বেশি। 

গত ১০ মার্চ আদানি গ্রুপ লক্ষ্ণৌতে নতুন টার্মিনাল স্থাপন করেছে, যার পেছনে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি রুপি। টার্মিনালটি উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নাভি মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজও শেষ করা হবে দ্রুত। এছাড়া গৌহাটিতে নির্মাণ করা হবে নতুন বিমানবন্দর। অরুণ বানসাল বলেন, ‘আমরা আমাদের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতেই থাকব।’ 

আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করণ আদানি দাবি করেন, বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করায় মনোযোগী। এর আওতায় প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বমানের অবকাঠামো ও প্রযুক্তি।

এদিকে পরামর্শক সংস্থা সিএপিএ জানিয়েছে, ভারতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতা দেশটির আকাশপথে পরিষেবার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে আদানি গ্রুপ ও জিএমআরের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। 

আদানি গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পুনে, গোয়ালিয়র, জবলপুর, দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, আলিগড়, আজমগড়, চিত্রকূট, মোরাদাবাদ ও আদমপুর বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ কৌশল রয়েছে। আদানি গ্রুপ ভারতজুড়ে উড়োজাহাজ পরিষেবার বিস্তৃতি ঘটাতে চায়। এজন্য বেছে নেয়া হচ্ছে ছোট শহরের নতুন বিমানবন্দরগুলো। সেখানেও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা পৌঁছে দিতে চায় এ কনগ্লোমারেট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন