অর্থনৈতিক সংকটের মুখে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

বৈশ্বিক পর্যায়ে সুদহার বৃদ্ধির কারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকের কাছে যে আমানত রয়েছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকটি যদি অর্থ সংকটে ভোগে তাহলে অস্তিত্ব ও সুনাম— দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খবর জাপানটাইমস।

দ্য ব্যাংক অব জাপানে (বিওজে) বর্তমানে ৭৫০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৪ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার রয়েছে, যার বেশির ভাগই বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদযুক্ত অর্থ। সামগ্রিকভাবে এর পরিমাণ ৪৯০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এগুলোর ওপর আরোপিত সুদহার দশমিক ১ শতাংশ।

দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী অর্থনীতিবিদ হিদেও কুমানো বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যাংক হয়তো অর্থ সংকটেও ভুগতে পারে।’

সূত্রের তথ্যানুযায়ী, বিওজে বর্তমানে বন্ড সংরক্ষণের পরিমাণ কমাবে। এর মাধ্যমে যে আমানত রয়েছে এর সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিও কমে আসবে।

আরো বলা হচ্ছে, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে সুদহার বাড়াতে চাইছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুদ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ বাড়বে। এ হিসাবে সুদহার ১ শতাংশ বাড়ানো হলে ব্যাংককে বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন দিতে হবে। যেখানে ২০২২ অর্থবছরে জাপানের ব্যাংকগুলোর মোট সাধারণ মুনাফা ছিল ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ইয়েন।

সুদহার বাড়ানো আমানতের ওপর প্রদেয় অর্থের পরিমাণও বাড়বে। ফলে বন্ড রাখার জন্য ব্যাংক যা পায় তার সঙ্গে আমানত বাবদ দেয়া সুদের মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকে অর্থ সংকট তৈরি হতে পারে।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী অর্থনীতিবিদ তাকাহিদে কিউচি জানান, বিওজে যদি বেঞ্চমার্ক রেট দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করে তাহলে প্রচণ্ড অর্থ সংকট তৈরি হবে। ২০২৩ অর্থবছরে জাপান সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ২ দশমিক ১৭ ট্রিলিয়ন ইয়েন গ্রহণ করেছে, যা দেশটির সরকারের মোট বাজেটের ২ শতাংশের কাছাকাছি।

ক্রমাগত সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে কুমানো বলেন, ‘এতে সরকার রাজস্ব হারাবে এবং এটি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক অর্থ সংকটে ভুগবে কিনা সেটি নির্ভর করছে ক্রমবর্ধমান সুদহার ও সংরক্ষিত অর্থ কী পরিমাণে ব্যয় হচ্ছে তার ওপর। মোট লাভ যদি লোকসানে পরিণত হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বিওজের সাবেক কর্মকর্তা কুমানো বলেন, ‘সরকার যদি ঘাটতি পরিচালনাকে খারাপ বলে তাহলে স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ বাধাগ্রস্ত হবে।’

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এরই মধ্যে সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ক্রমবর্ধমান সুদহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার লোকসান গুনেছে।

এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে লোকসান সত্ত্বেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিওজের গভর্নর কাজুও উয়েদা। সে সময় তিনি বলেন, ‘মুনাফা ও মূলধন সাময়িকভাবে কমলেও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতি পরিচালনা করার ক্ষমতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন