টিআইবির পর্যবেক্ষণ

সংসদ সদস্যদের চেয়েও বেশি সম্পদ বেড়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

সংসদ সদস্যদের চেয়েও গত পাঁচ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সম্পদ বেশি বেড়েছে বলে দাবি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। গড় আয় ও অস্থাবর সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়। 

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও ফলাফল তুলে ধরতে টিআইবি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। হলফনামার বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

টিআইবি জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ। সেই সঙ্গে নির্বাচিতদের প্রায় ৭৯ শতাংশই ব্যবসায়ী। জাতীয় পর্যায়ের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও জনস্বার্থ ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত, জনপ্রতিনিধিত্বের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের বিকাশই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদর্শিক ও জনকল্যাণমুখী জনপ্রতিনিধিত্বের কোণঠাসা অবস্থায় দেশের সুশাসন, গণতন্ত্র ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো ও সক্ষমতার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে। 

এবারের উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬৪ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২ হাজার ৯৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ১ হাজার ৫১৩ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করেছে বলে জানায় টিআইবি। বিশ্লেষণ শেষে সংস্থাটি বলছে, গত পাঁচ বছরে একজন জনপ্রতিনিধির আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৯০০ শতাংশ। এ সময় তাদের স্ত্রী কিংবা স্বামী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ। সম্পদ বৃদ্ধিতে দেশের মধ্যাঞ্চলের প্রার্থীরা এগিয়ে। যদিও প্রার্থীদের হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের সম্পদের হিসাবে অসামঞ্জস্য রয়েছে বলে জানায় টিআইবি। 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে জনপ্রতিনিধিত্বের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারকেন্দ্রিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিকাশ ঘটছে। হলফনামার তথ্যের বিশ্লেষণ এ ক্ষমতাকেন্দ্রিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করছে। ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বিকাশের অবারিত সুযোগ তৈরি হয় এবং কোনো জবাবদিহির মুখে পড়তে হয় না। জনপ্রতিনিধিত্বের অবস্থানকে আনুষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিকভাবে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ও বিভিন্ন যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ ও সম্পদ বৃদ্ধির লাইসেন্স হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে দলীয় নির্দেশনা বা শৃঙ্খলা উপেক্ষা করে মুনাফাকেন্দ্রিক উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বের অবস্থান দখল করা হচ্ছে।’ 

ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘যারা জনকল্যাণমুখী আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন, এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের কোণঠাসা ভাবছেন। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো এমন ব্যাপকভাবে ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে যে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই ভূমিকা রাখতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন