আইসিডিডিআর,বির সভা

যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বে যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দেশে প্রতি বছর ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সংক্রামক এ রোগে। এখনো বহু রোগী শনাক্তের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। ফলে যক্ষ্মা বাংলাদেশে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। গতকাল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) আয়োজিত এক সভায় আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে এসেছে। 

আইসিডিডিআর,বি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও দ্য স্টপ টিবি পার্টনারশিপের সহযোগিতায় ‘যক্ষ্মা চিকিৎসা ও নির্মূলে পলিসি  অ্যাডভোকেসি ও বেসরকারি খাতের যুক্তকরণ’ শীর্ষক সভায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকেও একত্র হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। 

সভায় জানানো হয়, যক্ষ্মা একটি প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও নিরাময়যোগ্য রোগ। তবুও রোগটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ প্রতি বছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং ৪২ হাজার মৃত্যু হয়। এছাড়া বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাও সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতা বাড়াতে পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স (পিপিএম) অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আরো বেশি জনগোষ্ঠীর কাছে সময়মতো ও কার্যকর যক্ষ্মা চিকিৎসা পৌঁছার সুযোগ আছে। পিপিএম কৌশলের মাধ্যমে উন্নত যক্ষ্মাসেবা সবার জন্য দেয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে রোগটি নির্মূল করা যাবে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, ইউএসআইডি বাংলাদেশের ওপিএইচএনের ডেপুটি অফিস ডিরেক্টর মিরান্ডা বেকম্যান বক্তব্য রাখেন।

ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। এ সামাজিক আন্দোলনে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবার সম্মিলিত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইসিডিডিআর,বির সহযোগিতায় জাতীয় সংসদের সদস্যদের দ্বারা এর মধ্যেই সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস গঠন করা হয়েছে। এ সংসদীয় প্লাটফর্ম সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধে প্রাসঙ্গিক লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমি সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কিন্তু এখনো কেন এটি সম্ভব হচ্ছে না তা বোঝা উচিত। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করলেও এখনো ৩০ ভাগের বেশি রোগীকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমাদের শনাক্তকরণ রোগীদের ক্ষেত্রে ৯৮ শতাংশ নিরাময় হচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু লাভের কথা চিন্তা না করে এগিয়ে আসা উচিত।’

মিরান্ডা বেকম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে শুধু সরকারিভাবে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় যে-ই শ্বাস নেয় সবাই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মা রোগের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে সরকারিভাবে ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৬৫ জেলা সদর হাসপাতাল, ৪২৯ উপজেলা হেলথ কেয়ার, ১ হাজার ৪৫৯ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, ১৪ হাজার ৭০০ কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়। অন্যদিকে দেশের ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। আর ৮৪ শতাংশ মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেয়। দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৬৭ মেডিকেল কলেজ, ৪ হাজার ২৮০ হাসপাতাল, ৯ হাজার ক্লিনিক ও ৬০ হাজার স্বতন্ত্র চিকিৎসকসেবা ও ৫ লাখ ফার্মেসি রয়েছে। এছাড়া কাজ করে ৪ হাজার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন