বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি।

সোমবার (৩ জুন) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪-২৫: উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ বিকল্প বাজেট উত্থাপন করা হয়। বাজেট উপস্থাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

বিকল্প বাজেটে বৈষম্য, অসমতা, দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সরকারের দেশী-বিদেশী ঋণনির্ভরতা কমাতে সুনির্দিষ্টভাবে ৩৪১টি সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে সরকারকে সেসব উৎসে হাত দিতে হবে, যেসব উৎসে অতীতে কখনো হাত দেয়া হয়নি অথবা প্রয়োজনমতো হাত দেয়া হয়নি। যার অন্যতম হলো সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, অর্থ পাচার ও কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, বিদেশী নাগরিকদের ওপর কর, বিভিন্ন কমিশন ও বোর্ড কর্তৃক আহরণ বৃদ্ধি এবং সরকারের সম্পদ আহরণের প্রচলিত বিভিন্ন উৎসে আদায়ের যৌক্তিক বৃদ্ধি। 

অর্থনীতি সমিতির মতে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মধ্যে এখন পরোক্ষ করের ওপর তুলনামূলক বেশি জোর দেয়া হয়, যা মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ায়। তাই পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিতে হবে এবং দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্ত মানুষকে সামনের কয়েক বছর আয়কর বেষ্টনির বাইরে রাখতে হবে।

অর্থনীতি সমিতি বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জিভূত আনুমানিক ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি কালো টাকা এবং পাচারকৃত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার মধ্যে থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যথাক্রমে ০.৯৮ শতাংশ ও ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করেছে, যেখান থেকে সরকারের আয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

সমিতির প্রস্তাবিত ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯২.১৩ শতাংশ। আর বাজেটের বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার (মোট ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ৫৬.১ শতাংশ), সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ গ্রহণ (মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১৪.৬ শতাংশ), এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ২৯.৩ শতাংশ)।

সমিতির প্রস্তাবে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না, যা চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটে ঘাটতি পূরণে ৩৯.৫ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট অর্থায়নে কোনো দেশী ও বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না বলে দাবি করেছে অর্থনীতি সমিতি।

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি)।

রাজস্ব আয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ২.০৩ গুণ বেশি)। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা (চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ৪.৪৬ শতাংশ কম)।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন