অর্থনীতি বড় করতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের মূল্যসংযোজন

বদরুল আলম

দেশে জিডিপির আকার গত অর্থবছরেই (২০২০-২১) প্রথমবারের মতো ৩০ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। এক দশক ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রেখেছে। ধারা অব্যাহত ছিল মহামারীর মধ্যেও। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে গত এক দশকে বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া উৎপাদনমুখী শিল্প খাত। অর্থনীতিতে মূল্যসংযোজনের পরিমাণ বাড়িয়েছে মাঝারি বৃহদায়তনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূল্যসংযোজন বেড়েছে ১৩১ শতাংশেরও বেশি।

কোনো বস্তুর প্রাথমিক অবস্থা থেকে শুরু করে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে এর মূল্যবৃদ্ধিকেই বলা হয় মূল্যসংযোজন। দেশে উৎপাদন খাতে মূল্যসংযোজনকারী উল্লেখযোগ্য শিল্পের মধ্যে রয়েছে খাদ্য-পানীয়-তামাক, ইস্পাত, সিমেন্ট, বস্ত্র পোশাক, চামড়া চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কাঠ কাঠজাত পণ্য, ভোজ্যতেল, রাসায়নিক, রাবার, প্লাস্টিক পণ্য, গ্লাস, স্টিল, সাধারণ ইলেকট্রনিক যন্ত্র এবং পরিবহন যন্ত্র যন্ত্রাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে মাঝারি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতিতে গ্রস ভ্যালু অ্যাডিশন বা মোট মূল্যসংযোজন করেছিল ৯৭ হাজার ৯৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২০ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ ২৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। হিসাবে গত এক দশকে মাঝারি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যসংযোজন বেড়েছে ১৩১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

স্থানীয় চাহিদা পূরণে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পগুলোর অবদান সংশ্লিষ্ট খাতে বড় রূপান্তরের আভাস দিচ্ছে। ইস্পাত শিল্পে রড উৎপাদনে প্রয়োজনীয় বিলেট আগে আমদানি করতে হতো। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। শ্রমঘন উৎপাদনমুখী শিল্প তৈরি পোশাক পণ্যের কাঁচামাল, সুতা, কাপড় থেকে শুরু করে মোড়ক পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই আগে আমদানি করতে হতো। আমদানিনির্ভরতা এখনো আছে। তবে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অন্যান্য উপকরণের প্রায় সবই তৈরি করার সক্ষমতা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন উৎপাদনমুখী অন্যান্য শিল্প খাতসংশ্লিষ্টরাও।

দেশের উদ্যোক্তারা একসময় ছিলেন শুধু ট্রেডিংনির্ভর। গত ১০ বছরে চিত্রে বড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। উদ্যোক্তারা এখন উৎপাদনমুখী হয়ে উঠেছেন। আগে তাদের কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে হতো আমদানিনির্ভর উপকরণ দিয়ে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে সে নির্ভরতাও কাটিয়ে উঠেছে।

শিল্প খাতের পর্যবেক্ষক উদ্যোক্তারা বলছেন, শিল্পায়নের পথে যাত্রার প্রাথমিক পর্যায়টুকু ট্রেডিংনির্ভরতার মধ্যেই কাটাতে হয়। ট্রেডিং কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রথমে বাজার তৈরি হয়। আর বাজার তৈরির পর অর্থনীতিও ক্রমে উৎপাদনমুখী হতে থাকে। আমদানিনির্ভরতার কারণে শুরুতে উৎপাদনমুখী শিল্পগুলোয় মূল্যসংযোজনের হার থাকে কম। পর্যায়ে উদ্যোক্তারা যখন বাজারের চাহিদা প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন, তখন তারা সংশ্লিষ্ট শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ স্থাপন করে আমদানিনির্ভর উপকরণও উৎপাদন শুরু করেন। বাংলাদেশেও এমনটাই হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রূপান্তরিত হয়েছে উৎপাদন খাত।

বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, স্থানীয় বাজারনির্ভর শিল্পগুলো, তা ক্ষুদ্র, মাঝারি বৃহৎ যে শিল্পই হোক সরকারের আরো মনোযোগী হতে হবে। শিল্পগুলোর সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারি বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই আরো আধুনিক ধ্যানধারণা আয়ত্ত করা প্রয়োজন। স্থানীয় বাজারনির্ভর শিল্পগুলোর অবদান অর্থনীতিতে অনেক বেশি। তাই শিল্পগুলো বিকাশে আরো জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশিত। ভূমিকা নিশ্চিত করা গেলে আগামী এক দশকে দেশের শিল্প খাতকে এক অনন্য উচ্চতায় দেখা যাবে বলে আশা করছি।

দেশের বড় শ্রমঘন উৎপাদনমুখী শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো পোশাক শিল্প। শিল্পের শুরুর দিকে বিদেশ থেকে উপকরণ আনার পর বাংলাদেশে শুধু সেলাইয়ের কাজটি করা হতো। এখন দেশের নিট পোশাকের ৯০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল দেশেই তৈরি হয়। আবার ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের মতো উপকরণ দেশেই তৈরি হয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। কৃষিনির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে শিল্পের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। এটা আগামীতে আরো বাড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের সহায়তা এক্ষেত্রে খুব জরুরি। সামগ্রিক অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে শিল্পায়নের পরিসর ক্রমেই আরো বাড়বে। আজকে শিল্পায়নের যে অবস্থান তৈরি হয়েছে, তাতে নীতিসহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।

মূল্যসংযোজনের মাত্রা বেড়েছে ইলেকট্রনিকস শিল্পেও। একসময় ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বাজারে সরবরাহকৃত পণ্যের প্রায় সবকিছুই আমদানি করত। এখন ওয়ালটনসহ আরো বেশকিছু কোম্পানি স্থানীয়ভাবে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করছে। স্মার্টফোনসহ নানা মোবাইল ডিভাইসও এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে।

দেশের ইস্পাত খাতেরও একই চিত্র। রড উৎপাদনের কাঁচামাল বিলেট এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশে রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও এখন আমদানিনির্ভরতা কমিয়েছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো পণ্যগুলো এখন আর আমদানি করা হচ্ছে না। আগে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের ঔদাসীন্য ছিল। বর্তমানে অনেকেই শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। শক্তিশালী হচ্ছে প্রকৌশল শিল্পও। ওষুধ শিল্পেরও প্রয়োজনীয় বেশকিছু যন্ত্র যন্ত্রাংশ বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। প্যাকেজিং শিল্পের অনেক মেশিনারিজও বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে।

ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্যমতে, বর্তমানে শিল্পটির বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায়। সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০। ইস্পাত খাতে বর্তমানে ৯০ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ৫৫ লাখ টন। যদিও করোনার কারণে গত বছর সেটি ৩০-৩৫ লাখ টনে নেমে এসেছিল। অবশ্য বছরের শুরুতে ইস্পাতের চাহিদা আবার বেড়েছে। খাতে এরই মধ্যে ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। ইস্পাতের বাজারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের, বিএসআরএম গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত, কবির স্টিল এমওএইচ স্টিল।

দেশে ইস্পাত খাতের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলিহোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার শিল্পোদ্যোক্তারা দেশে মেগা শিল্পের বিকাশ আমদানি বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছেন। যাদের বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েছে, তারা এগিয়ে আসছেন। এর সুফল পাচ্ছে ছোট ছোট উদ্যোগ। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলো সামনে রেখে উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। অর্থনীতিতে মূল্যসংযোজনের পরিসংখ্যানে এর সুফলই দেখা যাচ্ছে।

নির্মাণ খাতের আরেক বড় অনুষঙ্গ সিমেন্ট। শুধু আবাসন খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় নিয়েই সিমেন্ট বা ইস্পাতের মতো শিল্পগুলোর আরো অনেক বড় হওয়ার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, মাথাপিছু ইস্পাত সিমেন্ট ব্যবহারে বাংলাদেশ এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। তবে এখন একটু একটু করে হলেও চিত্র বদলাচ্ছে। একসময় দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ছিল শুধু ঢাকা চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এখন তা বিভাগীয় পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া রেমিট্যান্সপ্রবাহও নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে সিমেন্টের বাজার ২৮ হাজার কোটি টাকার। খাতে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। এর মধ্যে পাঁচটি বহুজাতিক। সিমেন্ট খাতের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ছয় কোটি টন। যদিও ব্যবহূত হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টন। উদ্যোক্তারা খাতে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন। সিমেন্ট খাতের শীর্ষ উৎপাদকদের মধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বসুন্ধরা সিমেন্ট, সেভেন রিংস সিমেন্ট হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ।

বিসিএমএর প্রথম সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশে এক দশক আগেও নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হতো বেসরকারি খাতে। মোট ব্যবহারের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ সরকারি নির্মাণকাজে ব্যবহার হতো। বাকি ৮৫ শতাংশ হতো বেসরকারি খাতে। এখন গোটা চিত্রই দ্রুত উল্টে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। আবার সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই সিমেন্টের চাহিদা বাড়ছে। ফলে শিল্পটিও দ্রুত বড় হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে স্থানীয় বাজারনির্ভর উৎপাদনমুখী শিল্প। নির্মাণ শিল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকলেও তা আলোচনায় আসছে খুব কম। বিএসআরএম, আরএসআরএম, মেঘনা গ্রুপ কেএসআরএমের মতো বড় শিল্প গ্রুপগুলো এখন সিমেন্ট স্টিল পণ্য উৎপাদনে যুক্ত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বা এফএমসিজি-সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোও বেশ বড় হয়ে উঠছে। এসব শিল্পের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, পানীয় চিনি। আকিজ গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, প্রাণ, আবুল খায়ের টিকে গ্রুপের মতো শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব শিল্পে বিনিয়োগ রয়েছে।

বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, একটি শিল্পে বেশি নির্ভর করলে অর্থনীতি ভঙ্গুর হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতেও পর্যায়ক্রমে বৈচিত্র্য এসেছে। আবার কিছু খাতে সরকারের নীতিসহায়তাও আছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে কিছু শিল্প বেড়ে উঠছে, যেমনকৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পোলট্রি ইত্যাদি। পোলট্রিতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। মত্স্য খাতেও বিপ্লব ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে প্রক্রিয়াজাত পণ্য শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এগুলোর স্থানীয় চাহিদা বেড়েছে। আবার খাতসংশ্লিষ্টরাও উদ্যমী হয়ে উঠেছেন। এর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সহায়তা কাজে লাগিয়ে শিল্পগুলো আরো বড় হয়েছে।

হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য ছাড়া ওষুধ শিল্পে এখন আর আমদানিনির্ভরতা নেই বললেই চলে। উল্টো বিশ্বের ১৫১টি দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ক্লিনিক্যাল গবেষণার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএর এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৫ শতাংশই স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পূরণ করতে সক্ষম। গত পাঁচ বছরে খাতটি সম্প্রসারিত হয়েছে বার্ষিক ১৬ শতাংশ হারে। খাতসংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরিসংখ্যান প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালে খাতের আকার বেড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। ওই সময় রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ কোটি ডলারে।

অনুকূল নীতিকাঠামোর কারণে দেশের ওষুধ খাতে বর্তমানে স্থানীয় করপোরেটদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। ওষুধ খাতের বর্তমান আকার ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ৭০ শতাংশই শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের দখলে। শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারের নীতিসহায়তা কাজে লাগিয়েই ওষুধ শিল্প বর্তমান অবস্থানে এসেছে। এক্ষেত্রে সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ধরনের প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন ছোট উদ্যোগেও বড়রা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দেশে বিভিন্ন ধরনের কিচেন হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্য রয়েছে, যা ফাস্ট মুভিং কনজিউমার ডিউরেবলস (এফএমসিডি) হিসেবে পরিচিত। ধরনের পণ্যের বাজারও ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা এসব পণ্য দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। খাতের বাজারের আকার প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার। খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন, সিঙ্গার বাংলাদেশ, জেনারেল ইলেকট্রনিকস গ্রি ইলেকট্রিক।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, আগে ফিনিশড গুডস বা চূড়ান্ত পণ্যটিই আমদানি করে বাজারজাত করা হতো। এখন সেই পণ্যটি দেশেই তৈরি হচ্ছে, আবার ওই পণ্য তৈরির মেশিনারিজও বাংলাদেশেই তৈরি। পর্যায়ক্রমে রকমই হয়। যখন বাজারে চাহিদা তৈরি হয় তখন ওই শিল্পগুলোও গড়ে উঠতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিসহায়তা তো আছেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা অনেক আগ্রাসী। তাদের নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের নীতিসহায়তাই উৎপাদনমুখী শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন