গ্রী এসি বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি)  বাজার এখন কেমন?

সম্প্রতি গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে আমাদের দেশেও উষ্ণতা বাড়ছে। প্রতি বছরই আমাদের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি বাড়ছে। একটা সময় এসি ছিল বিলাসিতার দ্রব্য, এখন সবারই এসি প্রয়োজন। যে কারণে দিন দিন এসির চাহিদা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরেই প্রতি বছরই এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় রেখে আমরাও তাই সাশ্রয়ী মূল্যে আরো ভালো পণ্য ও সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। 

আপনাদের ব্র্যান্ডের এসি প্রথম বাজারে এসেছিল কবে? তার পর থেকে আপনাদের বিক্রির অভিজ্ঞতা কেমন?

আমাদের গ্রী এসি ১৯৮৪ সালে চায়নায় প্রথম উৎপাদিত হয়। ১৯৯৮ সালে আমরা বালাদেশে গ্রী এসি নিয়ে আসি। অর্থাৎ গ্রীর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে আমরা মার্কেটিং শুরু করি। তারপর ২০০৪ সালে আমরা বাংলাদেশে অ্যাসেম্বলিং ফ্যাক্টরি করি। ২০১৫ সালে আমরা বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ জয়েন্ট ভেঞ্চারে ফ্যাক্টরি স্থাপন কার্যক্রম গ্রহণ করি, যেখানে বর্তমানে গ্রী এসি উৎপাদিত হয়। এখন আমরা কমপ্লিট ম্যানুফ্যাকচারিং করি বাংলাদেশে। এর মধ্যে এসি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেসব মোকাবেলা করেই আমরা আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে আমাদের উৎপাদনক্ষমতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই এসি তৈরি করছি। 

দেশের এসির বাজারে আপনাদের অংশগ্রহণ কত শতাংশ? আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলবেন?

বাংলাদেশের এসির বাজারের সিংহভাগই আমাদের দখলে। গ্রাহকের চাহিদা পূরণে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।

আপনারা কি বিদেশে এসি রফতানি করছেন? এসি রফতানিতে সম্ভাবনা কেমন?

বাংলাদেশে আমরা এসি উৎপাদন করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সামনের দিনগুলোয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসি রফতানি করার। এসি রফতানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং অন্যান্য প্রতিবশী রাষ্ট্রের কাছে পণ্যটি রফতানি করতে পারি। এর পাশাপাশি সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কর অব্যাহতির মতো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয় তাহলে দেশ থেকে এসি রফতানি করতে পারব। সুতরাং আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসি রফতানি করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন একটি শিল্প খাত সৃষ্টি হবে।  

আপনাদের এসির প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিয়ে বলবেন? এক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে আপনারা কতটা তাল মেলাতে পেরেছেন? 

আমাদের এসিগুলো বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। বাংলাদেশের ক্রেতারা এসি কেনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে। ক্রেতাদের এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে গ্রী এসি উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন আই ফিল টেকনোলজি, এ টেকনোলজির মাধ্যমে যেমন ইলেকট্রিসিটি সেভিং হবে পাশাপাশি কমফোর্টেবল টেম্পারেচার পাওয়ার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। যেমন বাইরে টেম্পারেচার ৪০ ডিগ্রি, তাহলে আমার কমফোর্টেবল টেম্পারেচার আসলে কত? এটি আমরা জানি না যার কারণে কখনো ১৬, কখনো ১৮, কখনো ২০-এ আমরা টেম্পারেচার সেট করছি।| তবে আই ফিল অপশনটি যদি চালু করা হয়, সেই ক্ষেত্রে এসি অটোমেটিক রুমের টেম্পারেচারকে কমফোর্ট করে দেবে। আমাদের রয়েছে বিশ্বের সর্বপ্রথম জি বুস্ট ইনভার্টার কম্প্রেসর, যার মাধ্যমে এসির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ লেভেলের ইলেকট্রিসিটি সেভিং করে। আমাদের গ্রী এসিগুলো সিক্সটি এইট ডিগ্রি টেম্পারেচারেও নরমালভাবে চলবে। এছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার যেটি কোল্ড প্লাজমা প্লাস এবং হিউমিডিটি কন্ট্রোলার। এর মাধ্যমে রুমের ভেতরের বাতাসে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থাকে সেগুলোকে ডিঅ্যাক্টিভ করে এবং হিউমিডিটি ব্যালান্স করে। যার ফলে লং টাইম এসির মধ্যে থাকলেও হাঁচি কাশিজনিত সমস্যা বা কোল্ড অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা হয় না। বর্তমান ঢাকা সিটির ওয়েদার মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ার কারণে আমরা আমাদের এসিতে ছয় স্তরের ফিল্টার যোগ করেছি, যার মাধ্যমে রুমের বাতাস থাকবে সম্পূর্ণ পিউরিফাই। এ কারণেই প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের এসি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বেও বেশ সমাদৃত।

বিদেশে তৈরি এসি আর দেশে তৈরি এসির মানে ফারাক কতটা?

দেশে তৈরি এসি এবং বিদেশে তৈরি এসির মধ্যে কোনো ফারাক নেই। বরং দেশে তৈরি এসির ক্ষেত্রে দেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখা হয়। অন্যদিকে বিদেশে তৈরি এসি আমাদের দেশের আবহাওয়া নিয়ে চিন্তা করে না। তাই আমি মনে করি, পরিবেশ বিবেচনায় বিদেশে তৈরি এসি থেকে আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো বেশি ভালো। আর আমাদের এসির কথাও যদি বলা হয়, যেহেতু আমরা গ্রীর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে আছি, বিদেশের মতোই আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো একই রকম যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। বিশ্বের সাম্প্রতিক সব প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের পণ্যে সম্পৃক্ত করছি। অনেক গ্রাহক মনে করেন বিদেশ থেকে এসি নিয়ে এলে সেটা বেশি ভালো হবে কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাংলাদেশে যে এসি উৎপাদিত হচ্ছে সেটিও বিশ্বমানের এবং বিশ্বে সমাদৃত। 

বাসাবাড়ির জন্য এখন কোন ধরনের এসির চাহিদা বেশি?

আমাদের উৎপাদিত এসির চাহিদা বাণিজ্যিক ভবন এবং বাসাবাড়ি দুই জায়গায়ই অনেক বেশি। এক টন থেকে পাঁচ টনের এসিও আমাদের রয়েছে। তবে বাসাবাড়িতে এক টন, দেড় টন বা দুই টনের স্প্লিট টাইপ এসির চাহিদাই বেশি। তবে যেহেতু সবাই এখন স্মার্ট প্রযুক্তি চায় সেহেতু দিন দিন ইনভার্টার এসির চাহিদা বাড়ছে। কারণ ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। 

এসি বিস্ফোরণ নিয়ে এখন ক্রেতাদের একটা দুশ্চিন্তা দেখা যায়। এ রকম দুর্ঘটনা কেন হয়? এড়ানোর জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

আসলে এসিতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটে না। এটা একটা ভুল ধারণা যে এসি থেকে বিস্ফোরণ হয়। আমরা যখন গ্রাহকের এসি ইনস্টল করি তখন মানসম্পন্ন অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করি। তাই গ্রাহকদের বলতে চাই আপনারা যখন এসি ইনস্টল করবেন তখন উন্নত মানের ইলেকট্রিক কেবল, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করবেন। তাহলেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এছাড়া প্রতি বছর দুবার এসির সার্ভিসিং করা ভালো। সেই সঙ্গে এসির ফিল্টারটা মাসে অন্তত দুবার, তা না হলে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত। এটা কেউ চাইলে নিজেই পরিষ্কার করতে পারে।

আপনাদের এসি ক্রয়ের পর আপনারা কী রকম সার্ভিসিং সেবা প্রদান করেন? 

সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টেকনিশিয়ান কাজ করছে। বিক্রীত সেবার মধ্যে আমরা আমাদের ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে দিচ্ছি ১০ বছরের ওয়ারেন্টি এবং নন-ইনভার্টার এসির কমপ্রেসরে দিচ্ছি পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি, অন্যান্য পার্টসের এক বছরের ওয়ারেন্টি এবং বছরের আফটার সেল সার্ভিস। ক্রয়ের এক বছরের মধ্যে আমরা গ্রাহককে একটি ফ্রি সার্ভিস দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে আমাদের রয়েছে হান্টিং নাম্বার ১৬৬৪৯ কল সেন্টার সেবা। যেকোনো সেবার জন্য গ্রাহকরা ওই নাম্বারে কল করলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। 

গ্রীষ্মের গরমে এসি কিনতে ক্রেতাদের জন্য আপনারা কোনো বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন কি?

আমাদের কোম্পানির পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫টি ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ নগদ ও মাসিক তিন থেকে আঠারো মাসের কিস্তিতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শোরুম, ডিসপ্লে সেন্টার, পার্টনার ও ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। আমাদের নিজেদের শোরুম থেকেও কিস্তিতে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে নিলে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তিতে ক্রয়ের সুবিধা দিয়ে থাকি। এছাড়া জিপি স্টারসহ রবি, বাংলালিংক গ্রাহকদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়।  

গ্রাহকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতে চান...

আমি গ্রাহকদের বলতে চাই, যারা এসি কিনবেন তারা একটি ভালো মানের এসি কিনুন যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। আমরা গ্রী এসিতে এই সুবিধা দিচ্ছি। গ্রী এসি জিরো কার্বন সোর্স অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত। গ্রী এসিতে রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে পরিবেশবান্ধব আর৩২ গ্যাস ব্যবহার করা হয়। গ্রাহকদের বলব, তারা যখন এসি কিনবেন তখন পরিবেশের কথা মাথায় রেখে যেন ভালো মানের একটি এসি কেনেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শাকেরা তাসনীম ইরা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন