মে’র শুরু থেকে টানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

হাওরের আধাপাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

নূর আহমদ ও ভজন দাস

হাওরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে দ্রুত ধান কাটছেন কৃষক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বোরো মৌসুমে চালের সবচেয়ে বড় জোগান আসে হাওরাঞ্চল থেকে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে ভাটির এ অঞ্চলে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই পাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। মাঠে এখন কেবল আধাপাকা ধান। তা নিয়েই শঙ্কায় কৃষক। কেননা মে মাসের শুরু থেকে হাওরাঞ্চলের জেলাগুলো এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এ পরিস্থিতিতে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই সে ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে। 

কৃষি সম্প্রসারণের হিসাব অনুযায়ী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা—হাওরাঞ্চলের এ জেলাগুলোয় চলতি বছর ৯ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ৪ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর এবং অন্যান্য প্রায় ৫ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরের অধিকাংশ জমির ধান এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। বাকি অংশ এখনো কাটার উপযোগী হয়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর প্রায় ৫৭ দশমিক ২৯ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ৮১ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও অন্যান্য জমির ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সম্ভাব্য ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ক্ষতির প্রভাব থেকে রক্ষায় হাওরাঞ্চলে আজকের মধ্যেই ধান কাটা শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে। কৃষককে বলা হয়েছে, জমির ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই কাটা যাবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সম্ভাব্য ভারি বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় হাওরাঞ্চলে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই বোরো ধান কাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষককে।’ 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট জেলার হাওরে ৮৩ শতাংশ ও অন্যান্য অংশের ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের হাওরে ৭০ ও অন্যান্য জমির ১৫, হবিগঞ্জ হাওরে ৬৮ ও অন্যান্য ২০ এবং সুনামগঞ্জ হাওরে ৮৭ ও হাওরের বাইরের ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। বাকি ধানও কয়েক দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে কৃষি অধিদপ্তর।

এদিকে নেত্রকোনা জেলায় এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলে ৮১ ও সমতলের ২১ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোয় পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের জমির ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

এ বিষয়ে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ বছর যথাসময়ে জেলার হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষাবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে এবার আগাম বন্যায় বোরো ধানের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জসহ জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষককে দ্রুত তাদের ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে আবহাওয়া বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৩ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব হাওরাঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনার অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এজন্য হাওর এলাকার কৃষকের জন্য আটটি পরামর্শ দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করে নিরাপদ ও শুকনো জায়গায় রাখতে হবে। পরিপক্ব সবজি দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন ধানের জমিতে পানি জমে না থাকে। জমির আইল উঁচু করতে হবে। ফসলের জমি থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। সেচ, সার ও বালাইনাশক থেকে বিরত থাকতে হবে। বৃষ্টিপাতের পর দিতে হবে বালাইনাশক। কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ও সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করার পরামর্শও দিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন