করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে দারিদ্র্যে ঠেলে দিয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত বছর করোনা মহামারী হানা দেয়ার পর থেকেই বিপাকে ছিল নিম্ন আয়ের এবং মধ্যবিত্ত ভারতীয়রা। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি বড় অংশই দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর প্রথম ধাক্কায় গত বছর বিশ্বে কোটি ৪০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে নিচে নেমে গেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় এবং সংখ্যা প্রায় কোটি ২০ লাখ। দারিদ্র্য বিমোচনে গত কয়েক দশক ধরে একটি দেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছিল, মহামারীর কারণে তা যেন হারাতে বসেছে। ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই এর দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা সামলাতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের অধ্যাপক উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জ্যোতি ঘোষ বলেন, সম্ভাব্য যেকোনো পথেই এটা খুবই খারাপ খবর। আমাদের প্রবৃদ্ধির গতিপথকে পেছনে টেনে ধরেছে এটা এবং আরো বেশি বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।

ভারত প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সামান্যই বিকল্প রেখেছে। গত শুক্রবার ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে রেকর্ড লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ।

অনেক রাজ্যেই লকডাউন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কাজের অভাবে অভিবাসী শ্রমিকরা গত বছরের মতোই বাসে-ট্রেনে চেপে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। সেদেশে টিকাদান কার্যক্রমও ধীরে চলছে, যদিও সরকার গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখন পর্যন্ত গত বছরের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কঠোর লকডাউন ঘোষণায়, যা ১০ কোটির বেশি ভারতীয়কে কর্মহীন করে দিয়েছিল। অনেক অর্থনীতিবিদই বলেছেন, গত বছরের লকডাউন মহামারীর পরিস্থিতিকে আরো বাজে অবস্থায় নিয়ে গেছে।

নরেন্দ্র মোদি সরকার যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য অনেক দেশের মতো সরকারি ব্যয় বাড়াতেও খুব আগ্রহী না। অথচ বাজেটে অবকাঠামো অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়ানো হলে তা ঋণ কমাতেও ভূমিকা রাখবে। মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজেদের ভূমিকার পক্ষে সাফাই গেয়ে নয়াদিল্লি বলছে, টিকাদান কার্যক্রমের অগ্রগতি হচ্ছে এবং এর ফলে অর্থনীতিতেও গতি ফিরে আসছে। অর্থনীতিবিদরাও অবশ্য আসন্ন বছরে ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছেন, যদিও সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় টিকাদানের হার কমেছে। এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার শতাংশের কম মানুষ টিকা পেয়েছে, যা অর্থনীতির পূর্বাভাসকে ম্লান করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা টানলে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণী হয়তো ততটা ধনী নয়, কিন্তু সেদেশের জন্য তারা একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছিল।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের সংজ্ঞায় যে বাড়িতে দিনে ১০ থেকে ৫০ ডলারের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ থাকে, তারা মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচিত। পরিমাণ আয় একটি ভারতীয় পরিবারকে ভালো এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস, একটি গাড়ি বা স্কুটার ব্যবহার করা এবং সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ানোর সক্ষমতা দেয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, বর্তমানে প্রায় কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় সংজ্ঞায় পড়েন, গত বছর মহামারী শুরুর আগে সংখ্যা ছিল কোটি ৯০ লাখ। ক্রমবর্ধমান সচ্ছল ভারতীয় পরিবারগুলোর আকর্ষণেই ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, ফেসবুক, নিশান অন্যান্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগ করেছে। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণী অর্থনীতির চেয়েও বেশি কিছু। এরাই আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারতের মূল চালিকাশক্তি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন