বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল খোলা থাকছে ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের নতুন নির্দেশনার ভিত্তিতে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে গতকাল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিনই ব্যাংক খোলা থাকবে। তবে এক্ষেত্রে লেনদেনের সময়সূচি হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা। এছাড়া লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করতে ব্যাংকের শাখা প্রধান কার্যালয় খোলা রাখা যাবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। তবে শাখা খোলা রাখার বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষে রাত ৮টার দিকে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এদিকে টানা আটদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবেএমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নগদ টাকা তুলে নিতে দেশব্যাপী ব্যাংকের শাখাগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়েন গ্রাহকরা। উপচে পড়া ভিড়ে উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। খালি হয়ে গিয়েছে অনেক ব্যাংকের ভল্ট। নিজ ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে অন্য ব্যাংক থেকে নগদ টাকা ধার করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

আবার অনেক ব্যাংককেই অন্য ব্যাংকে টাকা না পেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ধরনা দিতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও দিনভর নগদ অর্থের জোগান দিয়েছে। শুধু গতকালই দেশের ব্যাংকগুলোকে হাজার ২১ কোটি টাকার নোট জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকদের টাকা তুলে নেয়ার চাপ সামাল দিতে চলতি সপ্তাহেই এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে সাড়ে হাজার কোটি টাকা জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাড়তি লেনদেনের চাপ ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ (বিএসিএইচ) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিএসিএইচের আওতায় চেক ক্লিয়ারিং করা সম্ভব হবে না। এজন্য বিকল্প হিসেবে আরটিজিএসকে সক্রিয় করা হয়েছে। সাধারণত লাখ টাকার বেশি অর্থ আরটিজিএসের মাধ্যমে ক্লিয়ারিং হয়। কিন্তু বিএসিএইচ সচল না হওয়া পর্যন্ত সব অর্থই আরটিজিএসের মাধ্যমে ক্লিয়ারিং হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন। 

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৩ দফা নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি ঘোষণা আমলে নিয়ে টানা আটদিন ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ে সাধারণ মানুষ, ব্যাংকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্কণ্ঠা তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে ব্যাংক বন্ধের ব্যতিক্রমী নজিরবিহীন উদাহরণ বাংলাদেশের শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বণিক বার্তা। প্রতিবেদনে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশেই লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

বিষয়টি নিয়ে দিনভর নানা আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংক চালু রাখতে গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর পরই ব্যাংক খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব দিক পর্যালোচনা করে রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন ছাড়া দৈনিক ব্যাংকিং সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। এক্ষেত্রে লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সরকারি বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় বা প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা না থাকলে) খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রোববার মঙ্গলবার খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

লকডাউন চলাকালে ব্যাংকে গ্রাহকদের সব ধরনের জমা উত্তোলন চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রাহকদের হিসাবে সব ধরনের জমা উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার ইস্যু জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা অনুদান বিতরণ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদপূর্তিতে নগদায়ন কুপনের অর্থ পরিশোধ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউটিলিটি (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন) বিল গ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম বা  ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার অধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

সমুদ্র, স্থল বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা বুথ সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিধিনিষেধ চলাকালে বন্ধ শাখাগুলোর গ্রাহক সেবা কার্যক্রম খোলা শাখায় চলবে। বন্ধ শাখার গ্রাহকদের সেবাপ্রাপ্তির বিষয়ে জানাতে দৃশ্যমান স্থানে বিজ্ঞপ্তি টাঙাতে হবে। শাখা পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সীমিত লোকবল দিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এটিএম বুথগুলোয় পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন