উচ্চ নৌ-পরিবহন খরচে ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের

বণিক বার্তা ডেস্ক

বেশ কয়েক মাস ধরেই রফতানি পণ্যের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে চীন থেকে মার্কিন পশ্চিম উপকূল এবং ইউরোপীয় বন্দরগুলোয় রফতানি হওয়া পণ্যগুলোর দাম রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছেছে। দাম আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ বছরের সময়ে সাধারণত পণ্যগুলোর দাম কমে যায়। উচ্চ  নৌ-পরিবহন ব্যয় দাম বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা পালন করছে। বাড়তি ব্যয় শেষ পর্যন্ত বহন করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এর মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম আমদানিকারকদের স্বাক্ষরিত নতুন চুক্তির ফলে উচ্চ নৌ-পরিবহন ব্যয় স্থায়ী হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

বেশির ভাগ বড় খুচরা বিক্রেতা উৎপাদনকারীরা সাধারণত প্রতি বছর সময়ে সামুদ্রিক কনটেইনার পরিবহন সংস্থাগুলোর সঙ্গে বার্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের বৈশ্বিক কনটেইনার ভাড়া বিভাগের সম্পাদক জর্জ গ্রিফিথসের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় উত্তর আমেরিকার সঙ্গে এশিয়াকে সংযুক্ত করাসহ বৈশ্বিক রুটগুলোয় ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার পরিবহন ভাড়া হাজার ৫০০ থেকে হাজার ডলার হতে চলেছে। ভাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। গ্রিফিথস বলেন, এর মানে হলো লোকেরা এটি অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা করছে এবং শিগগিরই হার কমারও কোনো আশা নেই।

প্রণোদনার কারণে তৈরি হওয়া তীব্র চাহিদা, বন্দরগুলোয় চাপ এবং জাহাজ, কর্মী ট্রাকচালকদের সংকটের মতো বিষয়গুলোর সংমিশ্রণে নৌ-পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। আর সমস্যাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করাও সম্ভব নয়। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় বিষয়গুলো ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এশিয়া থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের বাইক প্রস্তুতকারক সংস্থা কেন্ট। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর্নল্ড ক্যামলার বলেন, আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি হোয়াক- মোল গেম খেলার মতো। আপনি একটি সমস্যার সমাধান করুন এবং তার পরে আরেকটি সমস্যা আপনার সামনে হাজির হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আমাদের নৌ-পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। যন্ত্রাংশের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নৌ-পরিবহন ব্যয়, কাঁচামালের দাম শুল্ক বৃদ্ধির কারণে গত ১২ মাসে চারবার কেন্ট বাইকের দাম বাড়াতে হয়েছে।

অনলাইন কার্গো প্লাটফর্ম নিউইয়র্ক শিপিং এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী গর্ডন ডাউনস বলেন, বড় ব্যবসাগুলো প্রায়ই তাদের অর্ডারের আকারের জন্য নিজেদের মতো করে ভাড়ার হার নির্ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ছোট সংস্থাগুলোর কিছু করার থাকে না। আপনার শিপিং সংস্থা যদি বড় না হয়, তবে আপনাকে চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করা হবে।

নৌ-পরিবহন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিল জানিয়েছে, বাজারে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরবরাহ চাহিদার কারণে হয়ে থাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট সিইও জন বাটলার বলেন, নৌ-পরিবহন ব্যয় কিছু বাড়লেও সেটি প্রতি ইউনিট পণ্যের ওপর খুব কমই প্রভাব ফেলে। পরিবর্তে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বেশির ভাগই চাহিদার ওপর নির্ভর করে। যখন আমরা কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়তে দেখি, তখনই সে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

নৌ-পরিবহন ব্যয়ের বাইরে বন্দরগুলোয় পণ্য জট পণ্য খালাসে অতিরিক্ত সময় লাগার বিষয়গুলোও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। কানাডার ড্যাম্বি অ্যাপ্লায়েন্সেসের প্রধান নির্বাহী জিম এসটিল বলেন, ট্রেন বা ট্রাকে তোলার আগে পণ্যবোঝাই কার্গোগুলো মাঝেমধ্যে ১০ দিনের মতো বন্দরে আটকে থাকে। এটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। একটি ফ্রিজার সাধারণত ১৫০ ডলারে বিক্রি হয়। কিন্তু শিপিংয়ে সমস্যার কারণে এখন সেই দামের সঙ্গে ৭০ ডলার যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি দাম বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া গত মাসে এক সপ্তাহ সুয়েজ খাল বন্ধ থাকার বিষয়টিও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন