বিপর্যস্ত অর্থনীতি

ভ্যাট বাড়িয়ে তিন গুণ করল সৌদি আরব

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে বিপর্যস্ত অর্থনীতির সহায়তায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়িয়ে তিনগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। আগামী জুলাই থেকে বর্তমানের শতাংশ ভ্যাট বেড়ে হবে ১৫ শতাংশ। একই সঙ্গে জুন থেকে নাগরিকদের জীবনযাপন ব্যয় ভাতা প্রদানও বাতিল করবে দেশটির সরকার। খবর বিবিসি এএফপি।

মূলত দুই বছর আগে প্রথম ভ্যাট চালু করে সৌদি আরব। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশটির অর্থনীতিকে শুধুই তেলনির্ভরতা থেকে বের করে আনা। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক বাজারে তেলের দরের রেকর্ড পতন হয়। একই সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নেয়া পদক্ষেপের কারণে স্তিমিত হয়ে পড়ে দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম। অবস্থায় অর্থনীতি সচল রাখতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল সৌদি সরকার। কিন্তু এমন পদক্ষেপে জীবনযাপন ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেখা দিতে পারে নাগরিক অসন্তোষ।

সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান এক বিবৃতিতে বলেন, বেশ পীড়াদায়ক হলেও দীর্ঘ বা মধ্যমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এসব পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তাছাড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যে নজিরবিহীন সংকট হাজির হয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব সীমিত রেখে তা সামাল দিতে আপাতত এর বিকল্প নেই। মূলত চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে সৌদি আরব। জানুয়ারি থেকে মার্চে দেশটিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৯০০ কোটি ডলার। তাছাড়া এক বছর আগের তুলনায় সময়ে তেল থেকে আয় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে হাজার ৪০০ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেশটিতে মোট আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। একই সঙ্গে সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে যে মার্চে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে গত দুই দশকের মধ্যে দ্রুততম হারে। অবস্থায় দুই বছর আগে চালু করা শতাংশ ভ্যাট ১৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।

এদিকে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে থেকেই সরকার বেশকিছু সরকারি সংস্থার ব্যয় বাতিল, সম্প্রসারণ কিংবা স্থগিত করছিল। ব্যয়সংকোচন করা হচ্ছিল এমন কিছু প্রকল্পে, যেগুলো উচ্চাভিলাষী সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চালু করা হয়েছিল। ফলে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক বিষয় নিয়েই সরকারকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। স্থগিত করতে হচ্ছে এমন সব কার্যক্রম, যেগুলো তেলনির্ভরতা কমিয়ে দেশটির অর্থনীতিকে বহুমুখী করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছিল।

গত সপ্তাহেই সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বর্তমানে তেলের দরপতন ভাইরাসের সংক্রমণের  দ্বিমুখী আঘাতের প্রেক্ষাপটে সরকারকে কঠোর পীড়াদায়ক পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সিনেমা হল রেস্তোরাঁ। এমনকি বাতিল করা হয় ওমরাহ হজও। জাদান বলেছিলেন, সার্বিক বিবেচনায় সৌদি আরবের তেল থেকে আয় অর্ধেক কমে যেতে পারে। কারণ বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। অবস্থায় চলতি বছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণ করেতে হতে পারে প্রায় হাজার কোটি ডলার। তাছাড়া এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২০ সালে সৌদি আরবের অর্থনীতির সংকোচন হতে পারে দশমিক শতাংশ।

ফলে বর্তমানের সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে মোহাম্মদ বিন সালমানের গৃহীত বিভিন্ন ব্যয়বহুল প্রকল্প উদ্যোগ। সন্দেহ দেখা দিয়েছে সৌদি যুবরাজের স্বপ্নের প্রকল্প অত্যাধুনিক শহর নিওম নিয়েও। পশ্চিম তীরে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন