সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলসহ তিন দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ফলে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এদিকে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে প্রত্যয় স্কিমের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করে গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে মোট নয়টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশনপ্রাপ্ত হন। ফলে এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, কেবল তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা নিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন। এ কারণে তারা ৬৫ বছর থেকে আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া এ ঘোষণা দেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তারা এতদিন কোথায় ছিলেন? আমরা এতদিন বিবৃতি-স্মারকলিপি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। সাড়ে তিন মাস আগে যদি আমরা জানতাম বয়সসীমা ঠিকই আছে, তাহলে শিক্ষকরা এত ক্ষুব্ধ হতেন না। এখন আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য একটা ব্যবস্থা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা বিশ্বাস করি না। ২০১৫ সালে তারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছে; তখনো আশ্বাস দিয়েছে। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, একটি কমিটিও হয়েছে। তবে নয় বছরেও আমরা সুপার গ্রেড পাইনি। সুতরাং আশ্বাস দিলে হবে না। আমাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বসতে হবে। আমাদের সুপার গ্রেড দিতেই হবে এবং প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।’
গত মার্চে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ২০২৪ সালের ১ জুলাই-পরবর্তী সময়ে যোগ দেয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের এ স্কিমের আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ মে সারা দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পরে ২৮ মে ২ ঘণ্টা ও ২৫-২৭ জুন তিন দিনব্যাপী সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। সর্বশেষ গত ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করা হয়।