![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_388579_1.jpg?t=1719536841)
গাজায় ইসরায়েলি হামলার নয় মাস পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ নেই। গতকালও রাফায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর এ মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ওই অঞ্চলের সংঘাত আরো বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উত্তেজনার পারদ বেড়ে যায় বুধবার হিজবুল্লাহপ্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ ভাষণের পর। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কোনো অংশ নিরাপদ থাকবে না।’ সাইপ্রাস ও অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায়ও হামলার হুমকি দেন তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকে হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলে নিয়মিত রকেট হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। এসব হামলার ফলে ঘরবাড়ি ছেড়েছে হাজার হাজার ইসরায়েলি। এ কারণে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ লেবাননের জোয়াইয়া এলাকায় হামলা চালায়। এতে হিজবুল্লাহর এক যোদ্ধা নিহত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য, নিহত ব্যক্তি হিজবুল্লাহর অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন। হিজবুল্লাহ তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছে। এরপর হিজবুল্লাহ আবারো ইসরায়েলে ডজন খানেক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তা ওর্না মিজরাহি রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরায়েল এ আক্রমণ কতদিন সহ্য করবে? আমার মনে হয়, বেশির ভাগ সরকার যুদ্ধ চায় না, তবে সম্ভবত ইসরায়েল সেদিকে এগোচ্ছে।’
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইসরায়েল বৈরুতকে গাজায় পরিণত করবে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ড বলেছে, তারা লেবাননে আক্রমণের জন্য একটি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে।’
সাবেক ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সারিত জেহাভি রয়টার্সকে বলেন, ‘১৭ বছর ধরে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হুমকির বিরুদ্ধে কিছুই করেনি। এ হুমকি মোকাবেলা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে।’
তবে বৃহত্তর সংঘাতের ফলে ইসরায়েলের খ্যাতনামা আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক সুলিভান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক তাজাখি হানেঘবি ও কৌশলগত সম্পর্কবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমান। সেখানেই ইসরায়েলকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন তারা। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন সেনাদের সেখানে সরাসরি মোতায়েন করা হবে না।
বিস্তৃত যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘লেবাননে আরেকটি গাজ়া পরিস্থিতির অভিঘাত বিশ্বের পক্ষে সামলানো কঠিন হব। একটি ভুল পদক্ষেপ বিপর্যয় ঘটাতে পারে, যা সীমানা ছাড়িয়ে যাবে এবং পরিণতি কল্পনার বাইরে।’