৩৩০০ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলল ভূমধ্যসাগরে

বণিক বার্তা ডেস্ক

জাহাজ থেকে উদ্ধার করা জিনিসপত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে ইতিহাসের গতিপথ বদলের ছবি: আইএএ

প্রায় ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ বছরের পুরনো, ডুবে যাওয়া একটি বাণিজ্য জাহাজের একাংশ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ভূমধ্যসাগর থেকে। ইসরায়েলি উপকূলের ৯০ কিলোমিটার দূরে এবং ১৮০০ মিটার গভীর সমুদ্রতল থেকে জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে। 

ইসরায়েল অ্যান্টিকুইটিস অথরিটি (আইএএ) বলছে, এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন জাহাজ। এ জাহাজ থেকে উদ্ধার করা  জিনিসপত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে ইতিহাসের গতিপথ বদলের। আইএএ বলছে, উদ্ধার হওয়া জাহাজ সেই যুগের উন্নত সমুদ্রবিদ্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য যোগাযোগের এক দলিল।

আইএএর ভাষ্যমতে জাহাজটি ব্রোঞ্জ যুগের শেষ দিককার সময়ের। যে কারণে এ আবিষ্কারকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। খবর সিএনএন। 

ইসরায়েলি উপকূল বরাবর রুটিন সার্ভে চালানোর সময়ে ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি ‘এনার্জিয়ান’ ওই বাণিজ্য জাহাজের পণ্যসম্ভার থাকা কয়েকশ কনটেইনারের হদিস পায়। এনার্জিয়ানের পরিবেশ বিভাগের প্রধান কার্নিট বাহারটান বলছেন, সমুদ্রের গভীরে জায়গাটা দেখে অস্বাভাবিক লাগছিল। মনে হয়েছিল, সমুদ্রতলে বিপুলসংখ্যক জগের স্তূপ। আসলে ব্যাপারটা কী তা বোঝার পর এনার্জিয়ান ও আইএএ যৌথভাবে তৎপর হয় ইতিহাসকে সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনতে। দুটো কার্গো ভেসেল ওঠাতে লাগে টানা দুদিন।

আইএএর মেরিন ইউনিট হেড জ্যাকব শারভিট বলেন, ‘‌এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গভীর সাগরে আজ অবধি আবিষ্কৃত প্রাচীনতম জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। জাহাজে পাওয়া জিনিসপত্র এটাই প্রমাণ করে যে ওই সময় সামুদ্রিক বাণিজ্য চালু ছিল। ধারণা করছি ওই জাহাজে তেল, ওয়াইন বা ফলের মতো অন্যান্য কৃষিপণ্য থাকতে পারে।’

তার মতে, হয় ঝড়ের কবলে পড়ে, না হয় জলদস্যুদের হামলায় জাহাজটা ডুবেছিল। যে ধরনের ঘটনা তখন ঘটত প্রায়ই। পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গভীরে এটাই প্রথম এবং প্রাচীনতম জাহাজের উদ্ধার হওয়া। যেখানে জাহাজটা পাওয়া গেছে, সেখান থেকে নিকটতম উপকূল ৯০ কিলোমিটার দূরে।

আইএএর বক্তব্য, এ আবিষ্কারে দুনিয়ার ইতিহাস বদলে যাবে। জেকবের ব্যাখ্যা, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কার্গো ভেসেলগুলো তৈরি করা হয়েছিল তেল, ওয়াইন, কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য। এ জাহাজ তার নিজের দেশের সঙ্গে সামুদ্রিক বাণিজ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সেতুবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

সেই সঙ্গে আইএএর মেরিন ইউনিটপ্রধান বলছেন, এতদিন পর্যন্ত অধিকাংশেরই ধারণা ছিল, সেই সময়ে এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে জাহাজ চলত কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, তটরেখা ঘেঁষে। যাতে ডাঙা থেকে জাহাজ দৃশ্যগোচর হয়। কিন্তু এ জাহাজ প্রথম দেখিয়ে দিল, সমুদ্রে বাণিজ্যিক পরিবহন আসলে হতো তট থেকে অনেক দূরে, পাড়ে থাকা মানুষের দৃশ্যপথের বাইরে। যা প্রমাণ করে প্রাচীন যুগের নাবিকরা কত দক্ষ ছিলেন! 

এই জাহাজের সন্ধান পাওয়ার পরই জানা যাচ্ছে ওই সময়ে  নাবিকদের নৌযান চালনার দক্ষতা কেমন ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা সেই সময়ের নাবিকরা আকাশের নেভিগেশন ব্যবহার করতেন। ওই পদ্ধতিতে সূর্য ও তারার অবস্থান জেনে সমুদ্রে চলাচল করতেন এবং কোনো উপকূল ছাড়াই তারা ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন