১৫ বছরে ইভি খাতে চীনের ব্যয় ২৩০ বিলিয়ন ডলার

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের বৃহত্তম ইভি নির্মাতা বিওয়াইডির তিনটি গাড়ি ছবি: বিওয়াইডি

দেড় বছর ধরে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) শিল্পের বিকাশে কাজ করছে চীন সরকার। এ সময় শিল্পটিকে গড়ে তুলতে ২৩ হাজার ৮০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে বেইজিং। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) এক বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। খবর সিএনবিসি।

সিএসআইএসের চাইনিজ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ট্রাস্টি চেয়ার স্কট কেনেডি বলেন, ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ ইভি বিক্রি হয়েছে তার ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ সরকারি সাহায্য পেয়েছে। ইভি বিক্রিতে এ ধরনের ব্যয়ের অনুপাত ২০১৭ সালের আগে ছিল ৪০ শতাংশের বেশি। তবে তা পরে কমে আসে, ২০২৩ সালে ছিল ১১ শতাংশের ওপরে।

চীনা ইভি শিল্পে ভর্তুকি ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি তদন্ত পরিচালনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও জানিয়েছে। তেমন সময় এ গবেষণা প্রকাশ হলো। এছাড়া গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীনা ইভি আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে শতভাগ।

স্কট কেনেডি আরো জানান, ইভির জন্য বেইজিংয়ের নীতিগুলো বিদেশী গাড়ির চেয়ে দেশীয় প্রস্তুতকারকদের পক্ষে ছিল। নিজস্ব শিল্প বিকাশের জন্য চীনের মতো এমন আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি জানান, শুরুর দিকে চীনে এ ভর্তুকির অপব্যবহার হয়েছে। প্রথম কয়েক বছরে অর্থ মন্ত্রণালয় ইভি শিল্পের বিকাশে ১৪ কোটি ডলার বরাদ্দ করে। কিন্তু কমপক্ষে পাঁচটি কোম্পানি সে অর্থের অপব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

বিশ্বের অন্যতম গাড়ির বাজার হলো চীন। দেশটির এ শিল্প বিকাশের উদ্যোগ বিদেশ থেকে গাড়ির প্রবেশও কমিয়ে দেয়। প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র হয় যে গত সপ্তাহে ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকরা বলেছেন, বড় মার্কিন গাড়ি নির্মাতাদের উচিত চীনের বাইরে মনোযোগ দেয়া।

স্কট কেনেডি বলেন, ‘স্বাধীন বিশ্লেষক ও পশ্চিমা গাড়ি নির্মাতা যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তারা সবাই একমত যে চীনা ইভি ও ব্যাটারি নির্মাতারা অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। বিষয়টি অবশ্যই আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত।’

তবে চীনা ইভি কোম্পানিগুলো ব্যাপক সরকারি সাহায্য ও বাজার বাড়াতে পারলেও এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে মুনাফা বাড়াতে পারেনি। কারণ চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য না থাকার কথা বলেন স্কট কেনেডি। এর অর্থ ভর্তুকির সুফল পাওয়ার আগেই শুল্ক বাধার মুখে পড়ছে চীনা ইভি।

সিএলএসএর আর্থিক বিশ্লেষণ অনুসারে, গত ১২ মাসে বিওয়াইডির গাড়িপ্রতি নিট মুনাফা কমেছে ৭৩৯ ডলার। টেসলার দাম কমেছে ২ হাজার ৯১৯ ডলারে। গত বছরে ইভি খাত তীব্র মূল্যযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে। তখন গাড়ি কোম্পানিগুলো হয় মূল্য কমিয়েছে অথবা কম মূল্যের মডেল বাজারে এনেছে।

এখনো লোকসানে থাকা চীনা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির স্টার্টআপ নিও পূর্বাভাস দিয়েছে, প্রায় ১০টি অটোমেকার চীনের বাজার হারাবে।

চীনের প্রণোদনা নিয়ে আপত্তি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র দেরিতে হলেও পরোক্ষভাবে গাড়ি কোম্পানিকে সমর্থন দিয়েছে। ২০২২ সালের আগস্টে স্বাক্ষরিত এক বিলে ক্লিন টেকনোলজির জন্য ৩৭ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়। এ আইনে ইভি কেনার জন্য সাড়ে ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে চীনা প্রণোদনার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। চীনে ইভিপ্রতি গড় সাহায্য ৪ হাজার ৬০০ ডলারের নেমে এলেও ২০১৮ সালে এ অংক ছিল ১৩ হাজার ৮৬০ ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন