উচ্চ সুদহার ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে ফেডারেল রিজার্ভের সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স

মহামারীর প্রভাব ও বিভিন্ন ধরনের সংঘাত চলমান থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধনের পাশাপাশি এ মত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছে, স্থিতিশীলতার অর্থ এ নয় যে বৈশ্বিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে না। বরং উচ্চ সুদহার ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এখনো প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। খবর সিএনএন।

গত সপ্তাহে সংশোধিত পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ২ দশমিক ৬ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে। এর আগে এ হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। পূর্বাভাস সংশোধন করে সংস্থাটি জানায়, স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও প্রবৃদ্ধি এখনো মহামারীর আগের স্তরে নেই। ওই সময়ের তুলনায় কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল বলেন, ‘চার বছর বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে মহামারী, সংঘাত, মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক কড়াকড়ি। এখন অর্থনীতিতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তবে তা ২০২০ সালের আগের তুলনায় নিম্নস্তরে রয়েছে। বিশ্বের দরিদ্রতম অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আরো উদ্বেগজনক।’

এক্ষেত্রে তিনটি ঝুঁকিকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো উচ্চ সুদহার, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং দেশগুলোর রাজনীতি ও বিদেশনীতি।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে ছয় মাস আগে যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল এর চেয়েও মন্থর গতিতে কমবে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে বিশ্বে গড় সুদহার নেমে আসতে পারে ৪ শতাংশে, যা মহামারীর আগের দুই দশকের গড় থেকে প্রায় দ্বিগুণ।

দেশগুলোর সুদহার হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। চলতি বছরের শুরু থেকে সুদহার কমার আশা করা হলেও গত সপ্তাহে সপ্তমবারের মতো সুদহার স্থির রেখেছে ফেড। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক ও ব্যাংক অব কানাডা সুদহার কমিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে অর্থনীতিতে।

ধারণা করা হয়েছিল, চলতি বছর তিন দফা সুদহার কমাবে ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, এক দফা ছাঁটাই হতে পারে, তাও কয়েক মাস পর। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সুদহার কমানোর বিষয়ে অগ্রগতির কথা স্বীকার করেছেন। এর সঙ্গে পুরনো কথাই শর্ত হিসেবে সামনে আনলেন। মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এলেই সুদহার কমবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোশে বলছেন, ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ সুদহারের অর্থ হবে কঠোর আর্থিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে আরো অনেক দুর্বল প্রবৃদ্ধি।’

এদিকে কভিড-১৯ মহামারীজনিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পন্ন না হতেই দুটো ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দেখছে সারা বিশ্বে। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ জ্বালানি তেলের মূল্য ও শিপিং খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ প্রবণতা কয়েক মাস ধরে চলমান, যা আরো দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি রোধ করতে পারে।

বর্তমানে দুই যুদ্ধের প্রাথমিক স্তরের তুলনায় জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ক্রুড ফিউচারের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৮২ ডলারে ৬০ সেন্টে স্থির হয়েছে। এছাড়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট লোহিত সাগরে কনটেইনার জাহাজে হামলার কারণে খরচ বেড়েছে এবং শিপিং বিলম্বিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রমবর্ধমান সংঘাত বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও ভোক্তাদের মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকি নিতে রাজি নাও হতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি চাহিদা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের নির্বাচন ও বাণিজ্য বিধিনিষেধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলতি বছর কয়েক ডজন দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। সামনে রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে নির্বাচন।

বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও মেরুকরণ উসকে দিচ্ছে। চীন থেকে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) ও অন্যান্য পণ্য আমদানিতে গত মাসে নতুন শুল্ক আরোপের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র, বছর শেষে এর আকার হতে পারে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে বেইজিং। এ ধরনের বাণিজ্য বাধা দুটি অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্ককে আরো বিস্তৃত অর্থে প্রভাবিত করবে। এছাড়া গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান কমিশন চীন থেকে আমদানি করা ইভিতে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বেইজিংও পাল্টা পদক্ষেপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন