জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ইসিবির সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবার ইউরোজোনে কমল সুদহার। ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদহার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। এর আগে গত সপ্তাহে কানাডা সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত দেয়। ইসিবি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলার পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর বিবিসি।
ইউরোজোনের অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কিছুটা প্রবৃদ্ধি ফিরে পেয়েছে। এ হার আগের প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির হার কম হলেও টানা ছয় প্রান্তিকের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে জানান, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ইউরোপ। তবে আগামী কয়েক বছর মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরই থাকবে বলে সতর্ক করেন তিনি। মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো না পর্যন্ত ইসিবি একটি নিয়ন্ত্রণমূলক সুদহার নীতি বজায় রাখার পরিকল্পনা করছে।
কুইল্টার ইনভেস্টরসের বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিন্ডসে জেমস বলেন, ‘ইসিবির সিদ্ধান্ত ইউরোজোনের অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। সুদহার কমায় ইউরোজনের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আসবে। এটি ঋণ সহজ করে তুলবে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমকেও বাড়াতে সাহায্য করবে।’
গত মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য বাড়লেও ফ্রাঙ্কফুর্টে ৬ জুন এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি-নির্ধারকরা সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। অঞ্চলটিতে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৬ শতাংশে, যা এপ্রিলে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে গত সপ্তাহে কানাডা সুদহার ৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে কমিয়ে আনে। সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডও সম্প্রতি সুদহার কমিয়েছে।
ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক মূল্যায়নে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আস্থার পাশাপাশি সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু সংকট। এ বিষয়গুলো খাদ্যমূল্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিনিয়োগ সংস্থা পিজিআইএমের প্রধান ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ ক্যাথরিন নেইস আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, বছরের শেষ নাগাদ ইউরোজোনের সুদহার ৩ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে চলে আসবে। তিনি বলেন, ‘গত বছরের শেষদিকে ইউরো অঞ্চল যে মন্দাভাব দেখা গিয়েছিল তা থেকে উৎসাহজনকভাবে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার হয়েছে, তবে এটি এখনো মন্থর রয়েছে।’
অবশ্য ইউরোপের অন্যতম অর্থনীতি যুক্তরাজ্যে এখনো সুদহার কমতে শুরু করেনি। আশা করা হচ্ছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড চলতি মাসের প্রথম দিকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে। যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২২ সালের শেষের দিকে ছিল ১১ শতাংশ। গত মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছিল, বছরের শেষ নাগাদ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে সুদহার হ্রাস করা উচিত।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভও শিগগিরই সুদহার হ্রাস করবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হার ইউরোজোনের চেয়ে বেশি, যা এখন ৩ দশমিক ৪ শতাংশে রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন নভেম্বরের নির্বাচনের আগে সুদহার নিয়ে প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ।
