দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য বিশ্বে সংকট বাড়াচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

পৃথিবীর উত্তর দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্যের কারণে মানবতা একটি সংকটের ঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, বিভাজন যে শুধু নীতিগতভাবেই অগ্রহণযোগ্য তা নয়, এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। এটি বিশ্বের শান্তি নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য গার্ডিয়ানকে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক খাদ্য, জ্বালানি আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের আগে থেকেই নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব নানা ধরনের সংকটের মুখে পড়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ তা আরো ঘনীভূত করেছে, যার ফলে উন্নত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন প্রকট হয়ে উঠেছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এখনো বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখন যেভাবে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে উত্তর দক্ষিণাংশের মধ্যে খুবই মারাত্মক আকারে বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে, যা বিশ্বের শান্তি নিরাপত্তার জন্য শুভ নয়।

চলতি সপ্তাহে পর্তুগালের লিসবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন। প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়টি হলো কীভাবে বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা দরিদ্র ধনী দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য বড় করছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো আমরা একটি ঝড়ের মধ্যে রয়েছি। কারণ সব সমস্যার মূলে রয়েছে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা সাধারণ মানুষের পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়া। এসবের সমাধান করা না গেলে পরিস্থিতি সামনের দিনে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান সতর্ক করে বলেছিলেন, বিশ্বের অনেক দেশ রাশিয়া ইউক্রেনের গমের ওপর নির্ভরশীল। দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়বে।

তবে গুতেরেস বলছেন, এসব সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট হলো জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সংকট। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের ওপর থেকে মানুষের দৃষ্টি সরে গিয়েছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে সবকিছুর চেয়ে জরুরি হলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমষ্টিগত পদক্ষেপ নেয়া। কেবল পৃথিবীই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে খোদ মানব প্রজাতি।

গত নভেম্বরে গ্লাসগোয় হয়ে যাওয়া জলবায়ু সম্মেলনে -সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মূলে ছিল কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বের দেশগুলোর নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে। কীভাবে নিঃসরণ কমানো যায়, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কপ২৬ সম্মেলনে -সংক্রান্ত কিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে উন্নত দেশগুলো।

কিন্তু জাতিসংঘ মহাসচিব মনে করেন, বিশ্ব আসলে উল্টোপথে হাঁটছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজের তেমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। সব সূচকই বলছে, জলবায়ু সংকট দ্রুত বাড়ছে। গত মাসে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প এবং এসব প্রকল্পে অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান প্রকল্প মানবতার জন্য ক্ষতিকর। ২০৩০-৪০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্পগুলো বন্ধ করতে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন