প্রেমের ফাঁদে ৩ লাখ পাউন্ড খোয়ালেন ব্রিটিশ নারী

বণিক বার্তা অনলাইন

ডেটিং ওয়েবসাইটে পরিচয়। এরপর কথা বলা শুরু। আলাপ ওয়েবসাইটের চ্যাটবক্স থেকে হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তর। যোগাযোগের বিভিন্ন সময় ছবি আদান-প্রদানের পাশাপাশি ফোনেও কথা হয়েছে। কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। এরপর নানা দরকারের নাম করে অর্থ বাগিয়ে নিয়ে নিরুদ্দেশ! 

এমনই এক জালিয়াতির শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন ব্রিটেনের সাফলকের বাসিন্দা আনা (ছদ্মনাম)। ৫০ বছর বয়সী আনা বাবা-মায়ের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্ত অর্থ বিশ্বাস করে একজনকে দিয়েছিলেন। এরপর সেই লোক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। লজ্জায় বিষয়টি পরিবারের সঙ্গেও শেয়ার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ করেছেন।

পুলিশ এটিকে ‘রোম্যান্স জালিয়াতি’ বলে অভিহিত করছে। পুলিশ বলছে, জালিয়াতরা সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে এমন লোকদের ফাঁদে ফেলে। এর সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়।

আনা বলেন, কেবল ক্ষতির মাত্রাটির জন্য আমার খারাপ বোধ হচ্ছে না। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত কিছু হারিয়েছি। আমার জন্য তারা সারা জীবন সেসব সম্পদ জমিয়েছিলেন। 

২০১৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর টিম নামের ওই জালিয়াতের সঙ্গে আনার অনলাইনে কথা বলা শুরু হয়েছিল। একটি ডেটিং ওয়েবসাইটে তাদের পরিচয় এবং এরপর টিমের পরামর্শে তারা হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা শুরু করেন। টিম তার ছবি পাঠিয়েছিলেন এবং তারা ফোনেও কথা বলতেন। কিন্তু কখনো তাদের দেখা হয়নি।

আনা বলেন, টিমের কথায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার টান। পরিচয়ের কয়েক সপ্তাহ পর সে আমাকে বলে, সে একটি ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে কাজ করতে রোমানিয়া যাচ্ছে। এসময় আমার থেকে কিছু টাকা চায়। পরে তিনি কাস্টমস ফির জন্য ৬৮ হাজার পাউন্ড এবং ঠিকাদার ও সরঞ্জাম সংরক্ষণ বাবদ ২ লাখ পাউন্ডসহ মোট ৩ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড চায়। 

আনার প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু টিম বলেছিলেন, তার কাছে সরাসরি না দিয়ে তারই অনুবাদক হ্যারিয়েট নামে এক নারীর কাছে দিলেও হবে।

অর্থ দেয়ার পরই টিম যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আনা ব্রিটিশ কনস্যুলেট ও দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু রোমানিয়ায় টিমের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এই প্রতারণা আমাকে মারাত্মকভাবে মনোকষ্ট দেয়। আমি টানা কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি। খুব অসুস্থ বোধ করেছি। আমি প্রচণ্ড রকমের চাপের মধ্যে ছিলাম। 

তবে আনাই একমাত্র ভুক্তভোগী নন। ব্রিটেনের উত্তর-পূর্ব সামারসেটের বাসিন্দা হ্যারিয়েটও প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এই হ্যারিয়েটের মাধ্যমেই টাকা পাঠাতে বলেছিলেন টিম।

হ্যারিয়েট বলেন, টবি নামের একজনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। টবি তাকে বলেছিলেন, আনার কাছ থেকে আসা অর্থ বিনিয়োগের জন্য এবং এটা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে দিতে হবে। ওই অর্থের সঙ্গে হ্যারিয়েটকে ১০ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগ করার জন্যও টবি চাপ দিয়েছিলেন।

হ্যারিয়েটেরও টবির সঙ্গে অনলাইনে পরিচয় হয়েছিল এবং তারা ৮ মাস ধরে সম্পর্কে ছিলেন। এমনকি টবি তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল। হ্যারিয়েট বলেন, টবি তার বিলাসবহুল জিনিসপত্রের ছবি পাঠাতো এবং যুক্তরাজ্যে বাড়ি কিনে একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি আর এগুলোতে আগাতে পারি না এবং বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। 

লন্ডন পুলিশের অ্যাকশন ফ্রড তদন্ত করে বের করেছিল, হ্যারিয়েট যে অর্থ হস্তান্তর করেছেন- তা সুদূর পূর্বের একটি অর্থপাচার চক্রের হাতে গেছে। অবশ্য আনা ব্যাংকের মাধ্যমে তার অর্ধেক টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, আমরা আশা করি, আনা ও হ্যারিয়েটের অভিজ্ঞতা মানুষকে এমন ঘটনাগুলো পুলিশকে জানাতে উত্সাহিত করবে। আমরা জানি, ভুক্তভোগীরা সামাজিক লজ্জা থেকে বিষয়গুলো পুলিশকে জানায় না। আর এতে অপরাধীরাও সুযোগ পায়। এজন্য এগুলো পুলিশকে জানাতে লজ্জাবোধ করা উচিত নয়।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন