ব্যবসায়িক জৌলুস হারাচ্ছে টেলিকম খাত

দুই প্রান্তিক ধরে ঋণাত্মক ধারায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি। কমেছে নতুন ইকুইটি বিনিয়োগ ও গ্রাহকপ্রতি আয়। বাড়ছে কর ভার

মেহেদী হাসান রাহাত ও আরফিন শরিয়ত

ছবি : বণিক বার্তা

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিন দশক আগে বাংলাদেশে টেলিকম খাতের ব্যবসার গোড়াপত্তন ঘটে। এরপর থেকে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফাও বাড়তে থাকে, যার সুবাদে টেলিকম খাতের ব্যবসা হয়ে ওঠে বেশ আকর্ষণীয়। যদিও কয়েক বছর ধরেই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে এ খাতের কোম্পানিগুলো। প্রত্যাশিত মাত্রায় আয় ও মুনাফা করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। টানা গত দুই প্রান্তিক ধরে টেলিকম খাতের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। দেশে কোম্পানিগুলোর নতুন ইকুইটি বিনিয়োগের পরিমাণও কমেছে। অন্যদিকে প্রতি বছরই এ খাতে করভার বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশের টেলিকম খাত এখন আগের ব্যবসায়িক জৌলুস হারিয়ে ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় সংসদে সম্প্রতি উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও খাতটিতে করের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে সিম ট্যাক্স ৫০ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও করপোরেট করের হার সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গতকালই নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে টেলিকম অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। এ সময়ে টেলিকম খাতের নিম্নমুখী ব্যবসায়িক পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। 

এতে দেখা যায়, টেলিকম খাতের তিন বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংক ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তাদের বিক্রীত সেবার বিপরীতে আয় করেছিল ৭ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। এ সময় এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। যদিও পরের প্রান্তিক থেকেই টেলিকম খাতের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ তিন কোম্পানির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ। পরের দুই প্রান্তিকে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। এর মধ্যে গত পঞ্জিকাবর্ষের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ধারা বজায় রেখে চলতি ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ঋণাত্মক ১ দশমিক ২৪ শতাংশে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিকম শিল্পের জন্য ডলার একটি বড় প্রভাবক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আয়ের এক-পঞ্চমাংশ চলে যায় ক্যাপেক্স বিনিয়োগে। যখন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়, তখন এ খাতের মুনাফা কমে যায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি, পরিচালন ব্যয়, যন্ত্রপাতি, সিম কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল রোমিং এবং বৈদেশিক সব সেবার মূল্য বেড়েছে। এর ফলে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের দিক থেকেও মোবাইল ডাটা ও ভয়েস কল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের প্রবণতা বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অবশ্যই টেলিকম খাতের ব্যবসায়িক জৌলুস ফিকে হয়ে আসছে। এর বেশকিছু কারণ রয়েছে। এ খাতে বর্তমানে গ্রামীণফোনের একক আধিপত্য রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসএমপি ঘোষণা করলেও সেটি কতটা কাজে আসছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অন্যদিকে রবি ও বাংলালিংক যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে, সে হারে রিটার্ন পাচ্ছে না। মূলত অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে, তার প্রভাবে গত দুই প্রান্তিকে টেলিকম খাতের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ভয়েস কল থেকেই আমাদের দেশের টেলিকম খাতের অর্ধেকের বেশি আয় আসে এবং এতে অপারেটরদের ভালো মুনাফা হয়। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষেরাই ভয়েস কল বেশি ব্যবহার করেন। অর্থনৈতিক কারণেই এখন তারা আগের তুলনায় ভয়েস কলের ক্ষেত্রে কম খরচ করছেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ভয়েস কল ফ্রি। ডাটা বিক্রি থেকেই মূলত টেলিকম অপারেটরদের আয় আসে। বাংলাদেশে ডাটা কেনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তুলনা করলে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার তুলনায় বাংলাদেশে ডাটার খরচ বেশি। এ কারণে ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না। অন্যদিকে গত তিন-চার প্রান্তিকে ফোরজি হ্যান্ডসেটের পেনিট্রেশন কমে গেছে। স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের কারণে টেলিকম অপারেটরদের হ্যান্ডসেটের বাজারে সেভাবে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতে ডাটার ব্যবহারও বাড়ছে না। কারণ হ্যান্ডসেটের বাজারে টেলিকম অপারেটরদের সুযোগ দেয়া হলে তারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণেই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে। সর্বোপরি আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ও সিম ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি এ খাতের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে আমি মনে করি।’  

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তিনদিন ও ১৫ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করে দেয়ার কারণেও টেলিকম ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, এ সিদ্ধান্তের কারণে অনেক গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছে। গত দুই প্রান্তিকে ইন্টারনেটের ব্যবহার টানা কমেছে। তিনদিন ও ১৫ দিনের প্যাকেজ গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। এ দুই প্যাকেজ সিস্টেম বন্ধ হওয়ায় অনেক গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহার কমে গেছে। 

টেলিকম শিল্পে গ্রাহকদের মাথাপিছু মাসিক ব্যয়কে খাতটির গ্রাহকপ্রতি আয় (এআরপিইউ) হিসেবে প্রকাশ করা হয়। গত দুই প্রান্তিকেই এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে এ খাতের শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোন।  ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষের তৃতীয় প্রান্তিকে গ্রাহকপ্রতি ১৬৫ টাকা আয় হয়েছিল কোম্পানিটির। চতুর্থ প্রান্তিকে তা কমে দাঁড়ায় ১৬১ টাকায়। চলতি পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে তা আরো কমে ১৫৭ টাকায় নেমে আসে। গ্রাহকপ্রতি ইন্টারনেট (এএমবিপিইউ) ব্যবহারও কমেছে অপারেটরটির। টেলিকম কোম্পানির পরিচালন আয় থেকে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে যে মার্জিন থাকে সেটিকে সেই সময়ে গড় গ্রাহকের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গ্রাহকপ্রতি গড় মার্জিন (এএমপিইউ) হিসাব করে থাকে কোম্পানিগুলো। টানা গত দুই প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের গ্রাহকপ্রতি মার্জিন কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির গ্রাহকপ্রতি মার্জিন কমেছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

গ্রাহকপ্রতি আয়ের দিক দিয়ে গত তিন প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ১৪৬ টাকা গ্রাহকপ্রতি আয় হলেও তৃতীয় প্রান্তিকে তা কমে ১৪৪ টাকায় দাঁড়ায়। চতুর্থ প্রান্তিক ও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা আরো কমে ১৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। 

জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হওয়ার পেছনে আমরা কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছি। এর মধ্যে একটি হলো গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে যে সেবা নিয়ে অভ্যস্ত ছিল হুট করে রেগুলেটরি পলিসি চেঞ্জের কারণে তাতে বাধা পড়ল। তিনদিন ও ১৫ দিনের প্যাকেজ বন্ধ করে দেয়ায় ছোট ছোট প্যাকেজ ক্রয়ে অভ্যস্ত গ্রাহকরা কেনা বন্ধ করে দিল, যার প্রভাব পড়ল পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর। রেগুলেটরি পলিসি চেঞ্জের কারণে গ্রাহকের খরচ বৃদ্ধি হলো। অনেক গ্রাহক প্যাকেজ কেনাই বন্ধ করে দিল। দ্বিতীয়ত, আমরা দীর্ঘকালীন মূল্যস্ফীতির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ সময়ের মূল্যস্ফীতি গ্রাহকদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করে ফেলায় তারা মোবাইল ফোনের পেছনে খরচ কমিয়েছে। এর মধ্যে আবার নতুন করে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও সিম কার্ডের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা এ নিয়ে এখনই কথা বলতে চাই না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি আমরা।’

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুর দিকে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কারণে টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এসব বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন আসতে কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের করহার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। এটি অপারেটরদের মুনাফাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া কর নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিবাদের বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে। আদালতের নির্দেশে কিছু অর্থ এরই মধ্যে সরকারকে পরিশোধ করেছে অপারেটররা। সামনে আদালতের রায় তাদের প্রতিকূলে গেলে আরো অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের গ্রাহকপ্রতি রাজস্ব আয়ের পরিমাণও অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। সব মিলিয়ে টেলিযোগাযোগ অপারেটররা শুরুতে যে লাভের আশা করেছিল সেটি বর্তমানে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক এবং সিম ট্যাক্স আরোপ টেলিকম শিল্প এবং আমাদের গ্রাহকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চলমান মূল্যস্ফীতি সমস্যার কারণে টেলিকম শিল্পও কঠিন সময় পার করছে। তার ওপর অতিরিক্ত করের কারণে গ্রাহকদের খরচ তথা অর্থনৈতিক বোঝা বাড়ছে। গ্রাহকও নিজের খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পুরো শিল্পের ওপর। অথচ ডিজিটাল অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টেলিকম খাত এবং এর অবকাঠামোর ওপর নির্ভর করে। টেকসই শিল্প ব্যবস্থা এবং জাতীয় উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভয়েস কল ও এসএমএসের পরিমাণ কমে আসছে। এর বিপরীতে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৫৩৩ কোটি মিনিট ‘অন-নেট কল মিনিট’ বিক্রি করে অপারেটররা। এর আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৩৭৪ কোটি মিনিট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রাহকরা অভ্যন্তরীণভাবে এসএমএস ব্যবহার করেছিল ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৬৬ লাখ। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৯৯ কোটি ৬২ লাখ। 

চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত এপ্রিল শেষে মোট মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজারে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার। এছাড়া রবি আজিয়াটার ৫ কোটি ৮৫ লাখ ১০ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের ৬৫ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। মোট মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার। সে অনুযায়ী, মোবাইল গ্রাহকের বড় একটি অংশ এখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না। গ্রাহকপ্রতি ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের দিক দিয়েও বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল মিলিয়ে একজন গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডাটা ব্যবহার করেন। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাসে গ্রাহকপিছু ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ২৭-২৯ জিবি। টেলিকম অপারেটররা বলছেন, গ্রাহকদের বড় একটি অংশ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার না করায় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের বিপরীতে রাজস্ব আসছে তুলনামূলক কম।

দেশে বর্তমানে তিনটি বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ অপারেটর তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। টেলিযোগাযোগ খাতে এ অপারেটরগুলো বিলিয়ন ডলারের অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে এসেছে। তবে বর্তমানে টেলিকম অপারেটররা নতুন করে ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে আর ডলার আনছে না। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের উচ্চ করহার ও আর্থিক নীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ খাতের এফডিআইয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাতে দেশে ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এফডিআই এসেছে ২১৭ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। যদিও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ তুলে নেয়ায় ২০২৩ সাল শেষে এ খাতে পুঞ্জীভূত এফডিআইয়ের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১৩২ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন