ফাইনালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত
Default Image

আইসিসি ইভেন্টের নকআউট পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার গল্পটা বিষাদময়। সারা আসরে দুর্দান্ত খেলেও নকআউটে, বিশেষ করে সেমিফাইনালে খেই হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাতটি সেমিফাইনালে হেরেছে তারা। এজন্য ক্রিকেটের ‘চোকার’ নামটাও স্থায়ীভাবে সেঁটে যায় তাদের গায়ে। এ অপবাদ আর বদনাম ঘুচিয়ে দেয়ার সুযোগ এসেছে এবার। বৈশ্বিক আসরে অষ্টমবারের চেষ্টায় অবশেষে ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। এ পথে তারা থামিয়েছে আফগান রূপকথা। আগামীকাল নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে তাদের সামনে ভারত। গতকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৬৮ রানে হারায় রোহিত শর্মার দল।

গতকাল ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর একটি ম্যাচ জিতলে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সঙ্গে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ কীর্তিও গড়বে এইডেন মার্করামের দল। 

লো-স্কোরিং ম্যাচে দীর্ঘদেহী পেসার মার্কো ইয়ানসেন ও তাবরাইজ শামসির ঘূর্ণির সামনে আফগানিস্তান অলআউট ৫৬ রানে! জবাবে ৫ রানের মাথায় কুইন্টন ডি কক আউট হলেও বিপদে পড়েনি প্রোটিয়ারা। হেসেখেলেই নির্ধারিত লক্ষ্য ছুঁয়েছে তারা। ৯ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে তারা ৬৭ বল হাতে রেখে। 

ইতিহাস গড়া আফগানরা প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলতে নেমে মাত্র ১১ দশমিক ৫ ওভারে শেষ! টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রান তো বটেই, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও যেকোনো দলের চেয়ে এটি সবচেয়ে কম রানের নজির। 

ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনারই ভরসা আফগানিস্তানের। টুর্নামেন্টের শীর্ষ  রান সংগ্রাহকের পাঁচজনের তালিকায় আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ এক নম্বরে ও ইব্রাহিম জাদরান তিনে। তারাই আফগানদের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ। সেমিতে ব্যর্থ হলেন তারা দুজনই। ইয়ানসেন শুরুতেই ফেরান গুরবাজকে। বিপর্যয়ের সেই শুরু। ২০ রানের মধ্যে নেই আরো তিন উইকেট। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি আফগানদের। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই তারা হারিয়েছে ৫ উইকেট। ২৮ রানে ৬ উইকেটের পতন। আফগানিস্তানের মিডল ও টপ অর্ডারের পুরোটাই তখন সাজঘরে। 

শেষ ভরসা হিসেবে ছিলেন রশিদ খান ও করিম জানাত। দুজনই করেছেন মাত্র ৮ রান! ইনিংসটা যখনই বড় হওয়ার স্বপ্ন জাগে, তখন একে একে ফেরেন জানাত, নুর আহমেদ ও রশিদ। আফগানরা ৫৬ রানে অলআউট। সর্বোচ্চ ১৩ রান এসেছে অতিরিক্ত খাত থেকে। প্রোটিয়াদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন ইয়ানসেন ও শামসি। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন এনরিখ নরকিয়া ও কাগিসো রাবাদা। ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ইয়ানসেন।

এর আগে বিশ্বকাপে বারবার হতাশায় বিদায় ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বৃষ্টি আইনের অদ্ভুত নিয়মের বলি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে তারা হারল ১৯ রানে। 

বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমিফাইনালে ৪৫ ওভারে ইংল্যান্ড করল ৬ উইকেটে ২৫২ রান। প্রোটিয়াদের রান তাড়ার সময় ৪৩তম ওভারের শেষ বলের আগে বৃষ্টি নামে। দলটির তখন লাগে ১৩ বলে ২২ রান। বৃষ্টিতে ২ ওভার হারায় প্রোটিয়ারা। তখন ১ বলে প্রয়োজন পড়ে ২১ রান। ‘মোস্ট প্রডাক্টিভ ওভারস’ (এমপিও) মেথডে এ টার্গেট দেয়া হয়। যদিও সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের স্কোরবোর্ডে ভুল দেখানো হয়। প্রথমে বলা হয়—৭ বলে ২২; এরপর দেখানো হয় ১ বলে ২২। আসলে এমপিও মেথডে হবে ১ বলে ২১ রান। যা-ই হোক, ক্রিকেট ইতিহাসেরই এ বিতর্কিত নিয়মের বলি হয়ে বিদায় ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার এবং তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। 

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে এক ব্রায়ান লারার হাতেই শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা। লারা ৯৪ বলে ১১১ রানের ক্ল্যাসিক ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৬৪ রানের পুঁজি গড়ে দেন। এ রান তাড়া করে ১৯ রানে হেরে যায় প্রোটিয়ারা। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপেও ট্র্যাজিক বিদায় ঘটে প্রোটিয়াদের। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনালে ল্যান্স ক্লুজনার আর অ্যালান ডোনাল্ড দৌড়ে এক রান নিতে পারলেই ফাইনাল। অথচ অদ্ভুতুড়ে এক দৌড় দিয়ে ডোনাল্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেন, আর প্রোটিয়াদেরও তীরে ওঠা হলো না। ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ায় সুপার সিক্সে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনালের টিকিট পায় অস্ট্রেলিয়া। পরে চ্যাম্পিয়ন হলো অজিরাই।

২০০৩ সালে নিজেদের মাঠে আরেকবার বিষাদময় বিদায়! হিসাবের ভুলে শ্রীলংকার সঙ্গে জেতা ম্যাচটি টাই করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। 

এরপর ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে, ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে, ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের কাছে, ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ও ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে প্রোটিয়ারা।

গত বছর ১৬ নভেম্বর কলকাতায় ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার পর ৩ উইকেটে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই শোক ভুলে আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে দলটি। তবে প্রোটিয়ারা এবার খালি হাতে ফিরতে চায় না। স্পিনার তাবরাইজ শামসি জয় শেষে বলেন, ‘এটা বড় এক অর্জন। কিন্তু আমরা কিন্তু শুধু ফাইনালে ওঠার জন্যই এখানে আসিনি। আমরা এখানে এসেছি ফাইনাল জেতার জন্য।’

তবে কাজটা শামসিদের জন্য মোটেও সহজ হবে না। প্রতিপক্ষ যে ব্যাটিং ও বোলিং মিলিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ভারত। গতকাল গায়ানায় রোহিতের ৫৭ ও সূর্যকুমার যাদবের ৪৭ রানে ভর করে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মারা। এরপর কুলদীপ যাদব (৩/১৯) ও অক্ষর প্যাটেল (৩/২৩) অসাধারণ বোলিংয়ে ভারতকে বড় জয় এনে দেন। ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১০৩ রানে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন