ভারতের দ্বিতীয় শিরোপা

আবারো তীরে এসে তরী ডোবাল দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হেনরিখ ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫২ রানের অনবদ্য ইনিংস প্রোটিয়াদের ম্যাচে ফেরালেও তা ব্যর্থ হয় ভারতীয় বোলারদের নৈপুণ্যে ছবি: এপি
Default Image

বিশ্বকাপের ‘চোকার্স’ তকমাটা স্থায়ীভাবে গায়ে সেঁটে যাওয়া প্রোটিয়াদের অবশেষে অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ এসেছিল। যদিও সুবর্ণ সুযোগ হারাল তারা। আরেকবার ব্যর্থ হলো। আবারো তীরে এসে তরী ডুবল। গতকাল বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের কাছে ৭ রানে হেরে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হারাল তারা। 

৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩০ বলে ৩০ রান এবং ২৪ বলে ২৬ রান করতে পারেনি তারা। ফলে প্রথমবার বিশ্বকাপও জেতা হলো না তাদের। অবিশ্বাস্য কামব্যাকে ২০০৭ সালের পর আবারো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। 

ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া ভারত প্রথম দুই ওভারেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করেন বিরাট কোহলি ও অক্ষর প্যাটেল। দুজনের ব্যাটে ভর করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। বলাবাহুল্য, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে এটাই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। হারের শঙ্কা তৈরি হলেও রেকর্ড সংগ্রহ নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতই জিতল। রান তাড়া করতে নেমে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা শেষে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তুলতে সমর্থ হয় প্রোটিয়ারা।

১৭৭ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের মতোই শুরুতে বিপর্যয়ে পড়ে প্রোটিয়ারাও। ১২ রানের মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলে রিজা হেনড্রিক্স ও এইডেন মার্করামকে। তখন কোহলির মতোই দলকে টানেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। যদিও তিনি ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে অর্শদীপকে বাউন্ডারি মারেন ডি কক। সেই একই জায়গা দিয়ে পরের বলেও বাউন্ডারি হাঁকাতে গেলে তিনি ধরা পড়েন কুলদীপ যাদবের হাতে (১০৬/৪)। দলের তখন ৪৫ বলে প্রয়োজন ৭১ রান। ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন ডি কক। 

আউট হওয়ার আগে ট্রিস্টান স্টাবসকে নিয়ে ৩৮ বলে ৫৮ ও হেনরিখ  ক্লাসেনকে নিয়ে ২৩ বলে ৩৬ রানের দুটি জুটি গড়ে ডি ককই প্রোটিয়াদের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। যদিও দায়িত্বটা সম্পন্ন না করেই তিনি সাজঘরের পথ ধরেন।

এরপর ২২ বলে ৪৫ রান যোগ করে ডেভিড মিলার ও ক্লাসেন দলের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। যদিও শেষ দিকে আবার চাপের মুখে ভেঙে পড়ে তারা। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে উইকেটকিপার ঋষভ পন্তকে ক্যাচ দেন ক্লাসেন। ২৭ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার আউটে আকস্মিকই বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি তারা। 

১৬ ওভার শেষে স্কোর ছিল ১৫১/৪। প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ জিততে ২৪ বলে প্রয়োজন ২৬ রান। ১৭তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ৪ রান দিয়ে ১ উইকেট (ক্লাসেন) ও ১৮তম ওভারে বুমরাহ ২ রান দিয়ে ১ উইকেট (ইয়ানসেন) তুলে নেন। ১৯তম ওভারে অর্শদীপ সিংও দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ৪ রান দিলেন। এ তিনটি ওভারই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিল। 

তিনটি অসাধারণ ওভার শেষে শেষ ৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন পড়ে ১৬ রান। ২০তম ওভারের প্রথম বলে ডেভিড মিলার সীমানার কাছে সূর্যকুমার যাদবের অবিশ্বাস্য ক্যাচে পরিণত হলে প্রোটিয়াদের আশার সূর্যও ডুবে যায়।

এর আগে ছিল কোহলির বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিং প্রদর্শনী। পুরো আসরে ফ্লপ করা এ সুপারস্টার বিদায়ী আসরের শেষ ম্যাচের নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন। 

বামহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই ডেঞ্জারম্যান রোহিত শর্মা ও ঋষভ পন্তকে ফেরান সাজঘরে। পঞ্চম ওভারে সূর্যকুমার যাদবকেও সাজঘরের পথ দেখান পেসম্যান কাগিসো রাবাদা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৪৫/৩! গভীর বিপদে পড়া ভারতকে তখন টেনে তোলেন কোহলি ও অক্ষর। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫৪ বলে ৭২ রান যোগ করেন দুজন। পঞ্চম উইকেটে শিবাম দুবেকে নিয়ে ৩৩ বলে ৫৭ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন কোহলি। 

মার্কো ইয়ানসেনের করা প্রথম ওভার থেকেই ১৫ রান নেন বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। কোহলি একাই ৫ বলে নেন ১৪ রান। পরের ওভারে স্পিন নিয়ে এলেন এইডেন মার্করাম। প্রথম দুই বলে রোহিত শর্মার হাতে বাউন্ডারি হজম করা কেশব মহারাজ চতুর্থ বলে সফলতা পান। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে হেনরিখ ক্লাসেনকে ক্যাচ তুলে নেন রোহিত। গত দুই ম্যাচে টানা ফিফটি করা রোহিত কাল ৫ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। 

নতুন ব্যাটার ঋষভ পন্ত পরের বলটি ডট দিতে সমর্থ হলেও ষষ্ঠ বলে পরাস্ত হন। সুইপ করতে গেলে পন্তের ব্যাটে টপ এজ হয়ে মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের হাতে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নিয়ে আউট দেয়া হয় পন্তকে।   

১৪তম ওভারে রানআউটের শিকার হন দুর্দান্ত খেলতে থাকা অক্ষর। ৩১ বলে ৪৭ রান করেন ১ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়। এরপর দুবেকে নিয়ে কোহলির দারুণ এক জুটি। ৫৯ বলে ৭৬ রান করে মার্কো ইয়ানসেনের শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন কোহলি। যদিও ততক্ষণে ১৯তম ওভারের খেলা প্রায় শেষ এবং ভারতও নিরাপদ অবস্থানে (১৬৩/৫)। শেষ ৭ বলে বোর্ডে আরো ১৩ রান যোগ করতে সমর্থ হয় ভারত। দুবে ১৬ বলে ২৭ রান করেন। মহারাজ ২৩ রানে দুটি ও এনরিখ নরকিয়া ২৬ রানে দুটি উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ২০ ওভারে ১৭৬/৭। দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৯/৮। ফল: ভারত ৭ রানে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: বিরাট কোহলি (ভারত)। প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট: জশপ্রীত বুমরাহ (ভারত)। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন