প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবি

কর্মবিরতিতে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গতকাল কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ কর্মবিরতির কারণে গতকাল দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমও বন্ধ ছিল।

এর আগে গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরপর একে একে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি একই কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। 

কর্মবিরতির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির পূর্বনির্ধারিত সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে দাবির পক্ষে 

বক্তব্য রাখছেন। ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেননি।’

শিক্ষকদের এ কর্মবিরতির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম অনিবার্য কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রোববার প্রকাশিত পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০ কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মসূচির পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একযোগে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে শিক্ষকতায় সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয় যাতে এ পেশায় আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের দেশে বিপরীত ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী যখন স্কিম ঘোষণা করেছিলেন তখন বলা হয়েছিল যারা পেনশনের আওতাভুক্ত নন, তারা এর আওতাভুক্ত হবেন। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এর আওতাভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। স্কিমের বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। সরকারকে সময় দিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন বলা চলে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং আমরা বাধ্য হয়েই এ ধরনের কঠোর কর্মসূচিতে গিয়েছি।’

প্রত্যয় স্কিমকে ‘অপরিপক্ব’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা এ আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। আগামী প্রজন্মের জন্য করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ যৌক্তিক ও ন্যায্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ 

এর আগে গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে আগের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মে সারা দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পরে ২৮ মে ২ ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন সারা দেশে তিনদিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করা হয়। সর্বশেষ গত ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। 

ওই দিনই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ জুলাই (গতকাল) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে পিজিডি প্রোগ্রামের সব কার্যক্রম ও ক্লাস বন্ধের পাশাপাশি সব ধরনের পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন অনুষদের সেমিনার, ডিন ও চেয়ারম্যান অফিস বন্ধ রাখা, প্রশ্নপত্র মডারেশন, নিয়োগ ও সিলেকশন বোর্ডের সভা, ইনস্টিটিউটের সব কার্যক্রম- অফিস, ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া গ্রন্থাগার অফিস ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাঠকসেবা বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়। 

শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়‌ পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর ১৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন জারির পর সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি বা আধা সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও এর আওতাভুক্ত হবেন। সে অনুযায়ীই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন