বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই বাজেট পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই জাতীয় সংসদে গতকাল পাস হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। বেলা ১১টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২৪ সংসদে উপস্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এ বাজেট নতুন অর্থবছরের শুরুর দিন অর্থাৎ আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। 

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন ‘‌টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামে নতুন অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন। সংসদ সদস্যদের ১১ দিনের আলোচনা শেষে গতকাল তা পাস হয়। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। এটি পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

এছাড়া মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধী দলের সাত সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তবে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য দেন। আলোচনায় আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তিন সপ্তাহ আলোচনা শেষে শনিবার সংসদে অর্থ বিল-২০২৪ পাস হয়। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আগেই অনুমোদিত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্জন করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। 

নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সাধারণ করদাতাদের আয়ে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে, যদিও বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন। সে হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি।

এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৭ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৬০ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। এ অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সংশোধনে তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন