চুক্তির আড়াই বছর পরও হেলিকপ্টার পায়নি এভিয়েশন পুলিশ

নিহাল হাসনাইন

প্রতীকী ছবি: জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স

বাংলাদেশ পুলিশের এভিয়েশন শাখার জন্য দুটি হেলিকপ্টার কিনতে প্রায় আড়াই বছর আগে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহের কথা ছিল রুশ প্রতিষ্ঠানের। এজন্য চারজন পাইলটও প্রস্তুত করে এভিয়েশন উইং। কিন্তু আজও তারা হেলিকপ্টার দুটি হাতে পায়নি। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি হেলিকপ্টার আসবে আগামী মাসে, পরের মাসে আসবে দ্বিতীয়টি।  

হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায় ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর। এরপর একই বছরের ১৯ নভেম্বর রুশ প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স’-এর সঙ্গে ‘এমআই ১৭১এ২’ মডেলের দুটি হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি করে পুলিশ। দাম ধরা হয় ৪২৮ কোটি টাকা। সঙ্গে পরিচালন ব্যয় আছে ৫০ লাখ টাকা। চুক্তিতে পুলিশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্সের পক্ষে সই করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক আন্দ্রে বোগিনস্কি। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের কারখানা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ পুলিশকে। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারীর কারণে পুলিশের প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফর করতে পারেনি। হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহে এ পর্যন্ত কয়েক দফা দিন নির্ধারণ করেও বাতিল করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহের আগে হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহের কথা ছিল। 

এসব হেলিকপ্টার পরিচালনায় মৌলিক প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করেছেন চার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)। ‘সলো ফ্লাই’ বা কো-পাইলট ছাড়া একক উড্ডয়ন সম্পন্ন করা চার পাইলট হলেন বিসিএস ৩৫ ব্যাচের মো. মুশফিকুল হক, সারোয়ার হোসেন, ৩৬ ব্যাচের ফাতেমা তুজ জোহরা ও ৩৭ ব্যাচের আবুল হোসাইন। এর বাইরে আরো দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আর্মি এভিয়েশনে হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কয়েকজন এসআই ও কনস্টেবলও র‍্যাবের এয়ার উইংয়ে যুক্ত হয়ে হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণ শিখছেন।

পুলিশের এভিয়েশন উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাইলটদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলেও পুলিশ এভিয়েশনের জন্য কেনা হেলিকপ্টারেও তাদের ট্রায়াল দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম কয়েক দিন আর্মি এভিয়েশনের প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে হেলিকপ্টার পরিচালনা করতে হবে। এ সময় পুলিশের পাইলটরা কো-পাইলট হিসেবে পাশে থাকবেন। 

‘এমআই ১৭১এ২’ মডেলের হেলিকপ্টার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। একবার তেল উঠালে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। হেলিকপ্টারগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার কেজি ওজন পরিবহনে সক্ষম। তবে এগুলো সামরিক কোনো কাজে ব্যবহার উপযোগী নয়। বাংলাদেশ পুলিশ দুর্গম অঞ্চলে তল্লাশি চালানোসহ আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত অন্যান্য কাজে এটি ব্যবহার করবে। 

গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) সারোয়ার মোর্শেদ শামীম জানান, রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানটি আগামী জুলাইয়ে একটি এবং আগস্টে আরেকটি হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে। এজন্য তিনি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে থাকা বরাদ্দ আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্থানান্তরের অনুরোধ করেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার দুটি ২০২৩ সালে সরবরাহের কথা থাকলেও হয়নি। পরে যোগাযোগ করা হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আগামী জুলাই ও আগস্টে সরবরাহ করবে। আশা করছি এবার নির্ধারিত সময়েই হেলিকপ্টারগুলো পর্যায়ক্রমে পুলিশ এভিয়েশনে যুক্ত হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন