বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

বছরের শেষদিকে কমে আসবে মূল্যস্ফীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এজন্য সংকোচনমূলক নীতিকৌশল আরো কিছুদিন চলবে। দ্রব্যমূল্যের ওপর যেন কোনো চাপ না পড়ে, সেজন্য বাজেটের আকার খুব বড় করা হয়নি। আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’

জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার উত্থাপিত আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

বাজেট-উত্তর এ সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব সহায়তার ফলে সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ সত্ত্বেও চলতি বছর ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আগামী অর্থবছরে আমরা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হব।’ 

মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কর কাঠামোর ক্ষেত্রেও আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যেমন নিত্যপণ্য আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। শেয়ারবাজারের লেনদেনের মাধ্যমে অর্জিত ক্যাপিটাল গেইনের রিয়েলাইজড অর্থের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার ওপরে হলেই শুধু আয়কর প্রযোজ্য হবে। আশা করি এর ফলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। সর্বক্ষেত্রে ক্যাশলেস লেনদেন নিশ্চিত করা, কর ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন ইত্যাদি সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’ 

ব্যাংক ঋণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া একটা মানসম্মত প্রক্রিয়া। এটা সব বাজেটে সব অর্থমন্ত্রী করেন। সব সরকারই করে এবং উন্নত দেশে এর পরিমাণ আরো বেশি। কাজেই এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সার্বিকভাবে সবার স্বার্থ রক্ষা হয় না। এটি সম্ভবও নয়। তবে সার্বিকভাবে জনগণের স্বার্থ রক্ষা হলো কিনা, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের কাছে এটি জরুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। মূল্যস্ফীতিটা কিন্তু স্থিতিশীল। মাঝে মাঝে ওপরে উঠছে আবার নামছে। একটা জায়গায় গিয়ে এটি থামবে। এজন্য বাজেটে অতিরিক্ত কোনো খরচ করা হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বা সরকারি কাজের জন্য ঋণ নেয়া একটা নৈমিত্তিক কাজ। ব্যাংকের নন-পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ একদিনের নয়। সরকারের মূল লক্ষ্য এনপিএল কমিয়ে আনা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা ও ব্যাংককে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, এ দুটোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।’

এ সময় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘উনি সময় চেয়েছেন, দুদক সময় দিয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটা শেষ করতে দিতে হবে। তারপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। 

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হয়েছে। ধান, চাল ও গমের মতো নিত্যপণ্যে কর কমিয়ে ১ শতাংশে আনা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে খাদ্যসহায়তার আকার বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তাব তৈরি করছি। আমরা টিসিবির স্থায়ী ডিলারদের দোকান দেয়ার চেষ্টা করছি। আমদানীকৃত পণ্য চিনি ও তেল দুটোই ভারসাম্যের মধ্যে আছে।’

এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা সর্বাত্মক বরাদ্দ দিয়ে আসছি। এনবিআর থেকে আয়কর ও কাস্টমসে লোকবল বৃদ্ধির চাহিদা এসেছিল। আয়করে আমরা এরই মধ্যে পর্যাপ্ত জনবল বাড়িয়েছি। আগামীতে আরো বাড়বে। কাস্টমসেও লোকবল বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এক মাসের মধ্যেই অনুমোদন দিয়ে দেব।’ 

প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রাখা নিয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য আমরা নানা কারণে কিছু সুযোগ দিয়ে থাকি। এছাড়া জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কিছু অর্থ আমাদের অজান্তেই অপ্রদর্শিত হয়ে যায়। এমন কিছু কারণে যারা রিটার্নে সম্পদ দেখাতে পারেনি, সে সম্পদগুলো দেখানোর সুযোগ করে দিতে এ সিদ্ধান্ত। অনেক দেশেই এ চর্চা চলে আসছে।’ 

প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিউটি রেট কমিয়ে রাখা আমার মনে হয় শেয়ারবাজারের জন্য খুব বেশি ইতিবাচক কিছু নয়। অনেক দিন ধরে অনেক ধরনের কর প্রণোদনা দেয়া ছিল। কিন্তু তখনো শেয়ারবাজার খুব বেশি ভালো অবস্থানে আসেনি। এখন শেয়ারবাজারের সমস্যা কি কর কাঠামোয়, নাকি অন্য কোথাও, সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কিনা? বা সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে কিনা? শেয়ারবাজারের উন্নয়নে করছাড় অনেক দিন ছিল। কিন্তু সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে করছাড়ের জায়গাটি আমরা ক্রমে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে এনবিআরের পরিকল্পনার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই বাজেটের লক্ষ্য শতভাগ অর্জিত হয় না। তবে আমাদের এবারের ঘাটতি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। সাধারণত এটি ৫ শতাংশের ওপর হওয়াটা অস্বাভাবিক। সে হিসেবে আমাদের ঘাটতি অনেক কম রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন